দুই দিন ধরে পানির নিচে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের একাংশ। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে বাইপাইল, ইউনিক ও জামগড়ার পোশাক শ্রমিকসহ লাখ লাখ মানুষ। ভোগান্তি মাথায় নিয়ে দুইদিন ধরে কর্মস্থলে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের।

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে বিকেলে টঙ্গী-আশুলিয়া ইপিজেড সড়কের বাইপাইল, ইউনিক ও জামগড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাইপাইল থেকে আলিয়া মাদরাসা আঞ্চলিক সড়ক, ইউনিক থেকে জামগড়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া, গাজিরচট, চিত্রশাইল, জামগড়া-বাগবাড়ি সড়ক, জামগড়া প্রায় প্রতিটি আঞ্চলিক সড়কসহ সাভারের রাজাশন, ব্যাংক কলোনি মহল্লার সড়ক তলিয়ে গেছে পানির নিচে। পোশাক শ্রমিকদের দুই সেট কাপড় নিয়ে কারখানায় যেতে হচ্ছে। কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তির যেন সীমা নেই কর্মমুখী মানুষের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিক থকে জামগড়া পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সড়ক বছরের বেশিরভাগ সময় পানির নিচে থাকে। কিন্তু সড়কে পানির পরিমান কম থাকায় সামান্য দুর্ভোগ সহজেই মেনে নিতেন পথচারীরা। তবে গতকালের টানা বৃষ্টিতে সড়কে জমেছে হাঁটু পানি। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী।

বাইপাইলের বগাবাড়ী থেকে প্রতিদিন কর্মস্থল রাজধানীর মিরপুরে যান মাহবুবুল করিম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করি। আমার তেমন কষ্ট হয় না। তবে সড়কে যানজটে পড়ে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। ময়লা পানি দিয়ে জুতা হাতে নিয়ে অনেক পোশাক শ্রমিককে যেতে দেখি। এই পানিতে তাদের চর্মরোগ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

বাইপাইল থেকে হেঁটে প্রতিদিন কর্মস্থলে যান আকলিমা আক্তার। তিনি বলেন, আমি হেলপারের চাকরি করি। এছাড়া আমার কর্মস্থলও বেশি দূরে নয়। তাই প্রতিদিন হেঁটে যাতায়াত করতাম। সড়কে বেশিরভাগ সময় পানি থাকে। সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অনেক গাড়িচালক দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যাওয়ায় গা ভিজে যায়। এছাড়া পানির ওপর দিয়ে হেঁটে গেলে পা জ্বালাপোড়া করে। কিন্তু এই পানিতে পা ভেজানো ছাড়া কর্মস্থলে যাওয়া সম্ভব নয়। পায়ে ঘায়ের মত হয়ে গেছে। এজন্য সাবান ও কাপড় নিয়ে কারখানায় যাই। কারখানায় গিয়ে সাবান দিয়ে পা ধুয়ে কাপড় পরিবর্তন করি।

ইউনিক বাসস্ট্যান্ডের এক ফার্ণিচার ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক সময় আমি স্টিলের র‌্যাক বিক্রি করতাম দিনে ১ থেকে ২০০ পিস। তখন ব্যবসা ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। যখন পানি জমে থাকা শুরু হলো তখন থেকে ব্যবসা বোঝা মনে হচ্ছে। সারা মাসে বিক্রি করে কর্মচারীর বেতন ও দোকান ভাড়া দিতে কষ্ট হয়। এই পানি অত্যন্ত ময়লাযুক্ত। রোগের সম্ভাবনা শতভাগ।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, ময়লাযুক্ত পানি হলে সড়ক পরিহার করা উচিত। এই পানি থেকে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। 

এ ব্যাপারে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনে পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছি। এ বছর একটু কষ্ট হবে। আগামী দুই এক মাসের মধ্যে ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ শুরু হবে। আগামী বছরে এই জলাবদ্ধতা আর থাকবে না।

তিনি বলেন, এই এলাকার পানি বের হওয়ার কোনো পথ নেই। তাতে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির পানি সড়কে নেমে আসে। আমাদের লোকজন সব সময় কাজ করছে। আশা করি খুব দ্রুত পানি নেমে যাবে।

মাহিদুল মাহিদ/আরএআর