‘মুই চিন্তায় বাঁচোং না, কি হইবে হামার’
প্রতিবন্ধী সন্তানসহ পাঁচ সদস্যর পরিবার হাফিজুদ্দির। পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি তিনিই। কিন্তু এক অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মাস তিনেক ধরে সেই পথও বন্ধ হয়ে যায়। পরিবার নিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন এই বাবা।
হাফিজুদ্দি (৬০) কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের বানিয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি। চিকিৎসা তো দূরের কথা ঠিকমতো তিনবেলা খাবার জুটছে না পরিবারটির। প্রায় দিনই না খেয়ে দিন অতিবাহিত করছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
এদিকে হাফিজুদ্দির ছেলে আব্দুল জলিল তিন মাস পর পর প্রতিবন্ধী ভাতা পান আড়াই হাজার টাকা। এটা দিয়ে সংসারের খরচ চালানো তো দূরের কথা, তার চিকিৎসার খরচই মিটানো দায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্বশুর বাড়ি থেকে পাওয়া ৮ শতক জমিতে একটি দোচালা টিনের ঘর ও একটি খড়ের রান্না ঘর রয়েছে হাফিজুদ্দির। এই বাড়িতে দুই ছেলে, স্ত্রী ও বৃদ্ধা শাশুড়িকে নিয়ে বসবাস তার। বড় ছেলে আব্দুল জলিল (২৭) জন্মগতভাবে বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করেই চলছিল তাদের সংসার। তবে গত তিন মাস থেকে বাবা হাফিজুদ্দি অসুস্থ থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে তাদের বাপ ছেলের ভিক্ষাবৃত্তির পথটিও। পরে টাকার অভাবে যেতেও পারেননি কোনো চিকিৎসকের কাছে। একদিকে হাতে টাকা নেই, অন্যদিকে পেটের ক্ষুধা মিটাতে হাফিজুদ্দির স্ত্রী ছুটছেন অন্যের বাড়ি বাড়ি।
বিজ্ঞাপন
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে হাফিজুদ্দি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তিন মাস থেকে আমি বিছানায় পড়ে আছি। চিকিৎসা করাতে পারছি না। টাকার অভাবে কিছু হচ্ছে না। স্ত্রী সন্তানদের খাওয়াতে পারছি না। আমার স্ত্রী মানুষের বাড়ি থেকে চাল আনে তা খেয়ে কোনোমতে জীবন বাঁচাচ্ছি আমরা। যে ঘরে থাকি সে ঘরটাও ভাঙা। একটু বাতাস হলেই ঘরটা পড়ে যাবে। মেম্বার চেয়ারম্যান আমার ধার ধারে না ভাই।
হাফিজুদ্দির স্ত্রী জমিলা বেগম বলেন, হামার ভাত নাই, মানষেরটেই চাউল খুঁজি নিয়া আসি খাবাইছি। বাড়িত নুন, মরুচ তরকারি কিছুই নাই। সকালে আলুর ভর্তা দিয়ে ভাত খাইছি। স্বামীর অসুখ, বেটার অসুখ কাজ করবার পায় না। মুই চিন্তায় বাঁচোং না। কি হইবে হামার এলা।
স্থানীয় কাশেম আলী বলেন, হাফিজুদ্দির সংসারে পাঁচজন সদস্য। সে তিন মাস থেকে অসুস্থ বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। তাদের খাওয়া দাওয়ার খুব কষ্ট। ডাক্তারও দেখাতে পারে নাই টাকার অভাবে। মেম্বার চেয়ারম্যান কোনোদিন আসেও নাই তার খবর নিতে। এই গ্রামে সবাই দিনমজুর। কে কার খবর নেয়। আমি যে তাকে একটু সাহায্য করব, আমারও তো অবস্থা ভালো না। তার প্রতিবন্ধী ছেলেসহ ঘরে শুয়ে শুয়ে শুধু কাঁদে। অসুকে হাফিজুদ্দির এমন চেহেরা হয়েছে, তার দিকে তাকানো যায় না। খুব মায়া লাগে তাকে দেখলে। আমি অনুরোধ করছি সরকারের পাশাপাশি সমাজের দানশীল ও বিত্তবান মানুষজন এই পরিবারটিকে সহযোগিতা করুক।
প্রতিবেশী গিতাবালা নামের এক নারী বলেন, হাফিজুদ্দি অসুস্থ তার ছেলেও অসুস্থ, কাজ করতে পারছেন না তারা। ঠিকমতো খাইতেও পারতেছে না। আবার তারা চিকিৎসাও করাতে পারছে না। খুব কষ্ট তাদের কেউ যদি তাদেরকে একটু সহযোগিতা করত তাহলে পরিবারটির অনেক উপকার হতো।
সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, পরিবারটি তো আমার কাছে কোনোদিন আসেনি। সরকার যদি তাকে সহযোগিতা না করে, আমি তাকে কীভাবে সহযোগিতা করব। তার পরেও পরিবারটিকে আমার কাছে পাঠান যদি কিছু করতে পারি তাহলে করব।
মো. জুয়েল রানা/এমএ