রংপুরে বুক জোড়া লাগানো শিশুদের ঢাকায় নিতে পারছে না পরিবার!
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে বুক-পেট জোড়া লাগা যমজ কন্যা শিশুর জন্ম দিয়েছেন এক প্রসূতি। জন্মের পর দুই শিশুকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সংকটাপন্ন ওই দুই নবজাতককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে অর্থাভাবে এখনো তাদের ঢাকায় নিতে পারেনি অসহায় পরিবার।
সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের কাছে শিশুর চিকিৎসা করাতে না পারার কথা জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গত শনিবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই দুই শিশুর জন্ম হয়। প্রসূতি লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের সাতপাটকি গ্রামের আরিফুল ইসলামের স্ত্রী লাবনী আক্তার (২২)। বর্তমানে দুই নবজাতক ও মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
প্রসূতি লাবনীর বাবা লাবলু মিয়া সাংবাদিকদের জানান, প্রায় ছয় বছর আগে আরিফুল ইসলামের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়। আরিফুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাদের পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও জানান, গর্ভবতী হওয়ার পর আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে যমজ শিশুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। পরে ২ অক্টোবর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাবনীকে ভর্তি করা হয়। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে গাইনি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সারমিন সুলতানা লাকী অস্ত্রোপচার করেন। জন্মের পর দুই শিশুকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
লাবলু মিয়া বলেন, আমি নিজেও একজন দিনমজুর। জামাইয়ের আর্থিক অবস্থা বেশি ভালো না। এ অবস্থায় চিকিৎসক বাচ্চাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
যমজ নবজাতকের মা লাবনী আক্তার বলেন, আমি আমার সন্তানদের সুচিকিৎসা চাই। আমাদের আর্থিক সক্ষমতা নেই। সরকারি সহায়তায় তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।
রমেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক আ. ন. ম তানভীর চৌধুরী নোমান বলেন, প্রাথমিকভাবে যমজ দুই শিশুর বুক ও পেট একসঙ্গে লাগা বলে মনে হচ্ছে। তাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সাপোর্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেই। তাদের শ্বাসকষ্ট আছে। এজন্য নবজাতকদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ অথবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য রেফার্ড করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, তাদের ঢাকা নিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা না থাকায় নিয়ে যেতে পারেননি। মানবিক দিক বিবেচনা করে দুই নবজাতককে শিশু ওয়ার্ডের শেখ রাসেল স্পেশাল কেয়ারনিউবর্ন ইউনিট (স্ক্যানু) বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
রমেক হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সারমিন সুলতানা লাকী বলেন, অস্ত্রোপচার সফল হলেও যমজ শিশুদের হার্ট ও লিভার একটাই। এক্ষেত্রে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালককে জানানো হয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস