ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে
দেশের অন্যতম প্রাচীন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে মারাত্মক আবাসন সংকট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত বন্দির জায়গা সংকুলানে কারা প্রকোষ্ঠে গাদাগাদি করে তাদের রাখা হয়েছে। ফলে কারা হাসপাতালের শয্যা ও জনবলের সংকটসহ তীব্র আবাসন সংকটে রয়েছে দেশের প্রাচীনতম এই কারাগার।
সম্প্রতি কারাগারের ৪তলা একটি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার পর ওই ভবনের ৮টি ওয়ার্ড থেকে বন্দিদের সরিয়ে অন্য ভবনের ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ফলে স্থানান্তর হওয়া বন্দিদের চাপে মারাত্মক আবাসন সংকট দেখা দিয়েছে কারাগারটিতে। ১ হাজার ৭৪২ জন বন্দি ধারণক্ষমতার কারাগারটিতে বন্দির চাপ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। প্রাচীন এ কারাগারের অধিকাংশ ভবন জরাজীর্ণ। অপরদিকে বাড়ছে নতুন বন্দিদের চাপ। এসব যাবতীয় সমস্যায় নিরুপায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকিয়ে আছে কারাভ্যন্তরে নির্মিতব্য নতুন ভবনের দিকে।
বিজ্ঞাপন
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রতিটি কনডেম সেলে জায়গা সংকটের কারণে ৩ থেকে ৪ জন বন্দি রাখা হচ্ছে। এতে করে বন্দিদের স্বাভাবিক বন্দিদশায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। কারাগারটিতে শতাধিক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, জঙ্গি ও নাশকতার মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বন্দি রয়েছেন। এ ছাড়াও সাধারণ বন্দিদেরও যথাযথ আবাসন সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কারা কর্তৃপক্ষ। আবাসন অসুবিধার ফলে বন্দিদের থাকা, খাওয়াসহ রাতে ঘুমানোতে ব্যাঘাত ঘটছে।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কারাগারের ৩৬টি কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০৬ জন পুরুষ আসামি ও ১৮ জন জঙ্গি সম্পৃক্ততার আসামি এবং দুটি কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯জন নারী আসামিকে রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তবে কারা অভ্যন্তরে এ বছরের জুন মাসে কয়েকটি নতুন ভবনের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেগুলোর সময় বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। তাই বন্দিদের আবাসন সংকট থেকে উত্তরণের সহজ কোনো পথ নেই বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কারাগারটিতে নারী বন্দিদের জন্য কোনো ধরনের ডিভিশন ওয়ার্ড ও হাসপাতাল সুবিধা নেই। বর্তমানে এখানে পুরুষ ও নারী বন্দিদের জন্য ২০টি ও হাসপাতালের জন্য ২টিসহ মোট ২২টি ওয়ার্ড রয়েছে। পরিত্যক্ত ভবনে আবাসনের ওয়ার্ড কমে যাওয়ায় গড়ে এ কারাগারে এখন বন্দি ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এ কারাগারে গড়ে মোট বন্দি রাখা হচ্ছে ৩ হাজারের মতো। তাদের মধ্যে শতাধিক নারী বন্দি রয়েছেন।
জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের ছোটরা এলাকায় ১৭৯২ সালে ৬৭ দশমিক শূন্য ৮ একর জায়গায় কুমিল্লা জেলা কারাগারের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে তা কেন্দ্রীয় কারাগারে রুপান্তর করা হয়। এটা দেশের পূর্বাঞ্চলের (চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) ৪টি কেন্দ্রীয় ও ১১টি জেলা কারাগারের মধ্যে ২৩১ বছরের পুরোনো কারাগার।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. আবদুল্লাহ আল-মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার দেশের প্রাচীন একটি কারাগার। কারাগারটির ভবনগুলো ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। ফলে বেশিরভাগ ভবনই পরিত্যক্ত। একদিকে ধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশি বন্দি, অপরদিকে ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় ওই বন্দিদের সরিয়ে রাখা হচ্ছে অন্য ওয়ার্ডের বন্দিদের সঙ্গে। এরমধ্যেই আমরা যতটুকু পারছি বন্দিদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে নতুন ভবনগুলোর কাজ শেষ হয়ে গেলে আবাসনের সংকট কেটে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কুমিল্লা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর রাশেদুল করীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারাগারের অভ্যন্তরে যে ভবনগুলো হচ্ছে সেগুলো করতে একটু সময় লাগছে, কারণ কারাগারের নিরাপত্তার কারণে চাইলেই দ্রুত কাজ শেষ করা যায় না। অনেকগুলো বিষয় আছে। এ বছরের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। তবে সংরক্ষিত এলাকার বাইরে কয়েকটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেগুলোর কাজ শেষের দিকে রয়েছে।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) কুমিল্লা জেলা শাখার সাবেক সভাপতি আলমগীর খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্দিদের নাগরিক সেবা এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত গুরুত্বের সঙ্গে কারাগারের আবাসন সংকট নিরসনে কাজ করা।
আরিফ আজগর/এএএ