হাত-পা নেই, তবুও তারা মারছেন চার-ছক্কা
কারো এক হাত নেই। কেউ পায়ে সমস্যার কারণে ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। কারো আবার এক চোখ নষ্ট। তবুও ক্রিকেটকে ভালোবেসে তারা নেমেছেন মাঠে। বাংলাদেশ-ভারত ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ বা শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট সিরিজে তারাই মারছেন চার-ছক্কা।
লালমনিরহাট সরকারি কলেজ মাঠে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক এ সিরিজের আয়োজন করে লালমনিরহাট ইউনাইটেড গোল্ডেন সিটিজেন ফাউন্ডেশন। রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় খেলাটি উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ ধরনের একটি সিরিজ। যা চলবে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত।
বিজ্ঞাপন
এসময় উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমঙ্গীর হোসেন ও সদর পৌর মেয়র রেজাউল করিম স্বপন। এছাড়া ভারতের খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকরা জানান, যারা মাঠে খেলছেন তাদের মধ্যে কারো এক হাত নেই, পায়ের সমস্যা থাকায় কেউ হাঁটেন খুঁড়িয়ে। কেউ জন্মগতভাবে শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এমন ক্রিকেটাররা খেলছেন মাঠে। তারা আগামী ১৮ অক্টোবর ফাইনাল খেলার মধ্যে দিয়ে তিনটি টি-২০ ম্যাচ শেষ করবেন। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক এ সিরিজের আয়োজন করেছে লালমনিরহাট ইউনাইটেড গোল্ডেন সিটিজেন ফাউন্ডেশন। আর এ সিরিজকে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবির ডিজেবল ক্রিকেট কমিটি। সিরিজে বাংলাদেশ দলে সারাদেশ থেকে বাছাইকৃত শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটাররা অংশ নিয়েছে বলেও তারা জানান। মূল ধারার খেলোয়াড়দের আয়োজন থেকে পিছিয়ে থাকা শারীরিক প্রতিবন্ধী এসব খেলোয়াড়দের জন্য আরও নানা আয়োজন করাসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
অপর দিকে ভারতের হায়দারাবাদ বোর্ড অব ক্রিকেট ডিজেবল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে দেশটির বিভিন্নস্থানের খেলোয়াড়রা খেলছেন।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট সিরিজে খুশি উভয় দেশের ক্রিকেটার, দর্শকসহ সংশ্লিষ্টরা। দর্শকরা জানান, অসচ্ছল শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও তারা যেভাবে মাঠে খেলাধুলা করছেন এতে নতুন প্রজন্মের কাছে একটি বার্তায় পৌঁছায়। সেটা হলো খেলাধুলার বিকল্প নেই। খেলাধুলা করলে মন ও শরীর দুটোই ভালো থাকে। এছাড়া তরুণ সমাজকে নষ্টের পথ থেকে ফিরে আনতে খেলাধুলা জরুরি। তাই আমাদের সন্তানদের খেলাধুলায় আগ্রহ বাড়াতে হবে।
লালমনিরহাট ইউনাইটেড গোল্ডেন সিটিজেন ফাউন্ডেশনের (অধিনায়ক) সিহাব মণ্ডল বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যদি আমাদের সুযোগ দিত তাহলে শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও যে দেশের সুনাম অর্জন করতে পারে তারা সেটা দেখিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আমাদের দিকে লক্ষ্যই দিচ্ছে না। আমরা অনুরোধ করব তাদের সুদৃষ্টি আমাদের দিকে যেন থাকে।
ভারতের ডিজেবল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (অধিনায়ক) জোতিরাম গুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ খুব অতিথি পরায়ণ। তাছাড়া তাদের দেশপ্রেমের কোনো সীমা নেই। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও তারা দেশের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। সত্যি এটি অনেক বড় গর্ভের বিষয়।
লালমনিরহাট ইউনাইটেড গোল্ডেন সিটিজেন ফাউন্ডেশন সভাপতি রেজাউল করিম স্বপন বলেন, গত ১৩ অক্টোবর শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন বৃষ্টির কারণে প্রথম ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে। তাই আজ সকালে ম্যাচটি শুরু করা হয়। আগামী ১৮ অক্টোবর লালমনিরহাট সরকারি কলেজ মাঠের এই সিরিজ শেষ হবে। ফাইনাল ম্যাচ শেষে বুড়িমারী দিয়ে তারা ১৯ তারিখে ভারত যাবে।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/আরকে