‘মনে হচ্ছে হাসপাতালে এসে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে’
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর চাপ। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। এতে নির্দিষ্ট শয্যার বিপরীতে অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত একসপ্তাহ ধরে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০০ জনের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যার মধ্যে শিশু ওয়ার্ডেই ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেশি। বেশিরভাগ রোগীই জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে শ্রাবন্তী চৌধুরী নামে এক শিশুর অভিভাবক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ৪ দিন ধরে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। শুরুতে কিছুটা জ্বর থাকলেও পরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এখনো কোনো সিট পাইনি। হাঁটাচলা করতে মানুষের পায়ের নিচেও পড়তে হয় মাঝেমধ্যে। ঠিকমতো ডাক্তার-নার্সদেরও কাছে পাই না।
অবর্ণা রিতু নামে আরেক অভিভাবক বলেন, ছেলের কয়েকদিন ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা ছিল। এখন পরীক্ষা করে জানতে পারি নিউমোনিয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে সেবার চেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেশি। মনে হচ্ছে আরও অসুস্থ হয়ে যাবে।
বিজ্ঞাপন
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২৬ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১১১ জন। রোগীর চাপে হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভেতর মেঝেতেও বাড়ানো হয়েছে শয্যা। কোথাও পা রাখার জায়গা নেই। ওয়ার্ডের ভেতরে স্থান না পেয়ে নিরুপায় হয়ে অনেক রোগী নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রুজাইনা রহমান নামে আরেক স্বজন বলেন, গত ৩ দিন ধরে একটি বেডের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতেছি। বারান্দায় মশা, মানুষের হাঁটাচলা। মনে হচ্ছে হাসপাতালে এসে আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তবুও সামর্থ্য না থাকায় নিরুপায় হয়ে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত একজন জ্যেষ্ঠ সেবিকা ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিশু ওয়ার্ডে ২৬ শয্যার বিপরীতে ১১১ জন রোগীকে আমরা ৩ জন নার্স সেবা দিচ্ছি। নিজেরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। কাজ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
রোগীর বাড়তি চাপ এবং সংকটের কথা উল্লেখ করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর উপচে পড়া ভিড়। আজও প্রায় চারগুণের বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় আমাদের শিশু ডাক্তার নেই। তারমধ্যে আবার ২-১ জন চিকিৎসক এখান থেকে বদলি হয়ে চলে গেছে। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছে। এমনিতেই এসময়ে শিশু রোগীর সংখ্যা একটু বেশি থাকে। কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে এ মুহূর্তে আরও জনবল প্রয়োজন। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান এ চিকিৎসক।
তারেক চৌধুরী/আরকে