আমনখেতে ইঁদুরের আক্রমণে দিশেহারা কৃষক
নেত্রকোণায় গাঢ় সবুজে ভরে গেছে আমন ধানের মাঠ। চারপাশে শুধু সবুজ আর সবুজ। ধান গাছে এখন থোর বের হওয়ার সময়। এই সময় ধানখেতে দেখা দিয়েছে ইঁদুরের আক্রমণ। ইঁদুরের দল কৃষকদের স্বপ্নের আমন ধান গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
এ অবস্থায় ইঁদুর আক্রান্ত জমিতে বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করেও প্রতিরোধ মিলছে না। তাই কৃষকরা বাধ্য হয়েই সনাতন পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। জমিতে ব্যবহার করছেন কলাগাছের খোসা, বিভিন্ন কবজ-তাবিজ সুঁতায় বেঁধে জমিতে ঝুলিয়ে রাখছেন কেউ। আবার কেউ কেউ ইঁদুর তাড়াতে ধানের জমিতে আস্তানা করে বাজাচ্ছেন বাদ্য যন্ত্র।
বিজ্ঞাপন
কৃষকদের এমন দুঃসময়ে কৃষি বিভাগের লোকজনের তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করলেও জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, ইঁদুরের আক্রমণ প্রতিরোধে তারা মাঠে কাজ করছেন এবং ইঁদুর নিধনে কৃষকদের নানা রকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, ধান উৎপাদনে সমৃদ্ধ জেলা নেত্রকোণায় এ বছর ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) ও স্থানীয় জাতের ধান রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে আবাদকৃত ধানের জমিগুলো বর্তমানে সবুজে ভরে উঠেছে। ধান গাছে বের হতে শুরু করেছে থোর। এমন সময় খেতের কাঁচা ধানে ইঁদুরের আক্রমণ শুরু হওয়ায় যেন কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ হতে চলেছে। কাঁচা ধানের গাছ ইঁদুর কেটে দেওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ইঁদুরের আক্রমণ সদর উপজেলা, বারহাট্রা, মোহনগঞ্জ, কলমাকান্দা ও কেন্দুয়া উপজেলায় বেশি। তবে অন্য উপজেলাগুলোর কিছু এলাকাতে ইঁদুরের আক্রমণ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জেলার কেন্দুয়া উপজেলার তুরুকপাড়া গ্রামের কৃষক আবু সাদেক বলেন, ফসলের জন্য ইঁদুর খুবই ক্ষতিকর। ইঁদুর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত আমন ধানের খেতগুলো দেখলে মনে হবে কেউ যেন ধারালো কাঁচি দিয়ে কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। ইঁদুরের আক্রমণ বন্ধ করতে ধানখেতে বিভিন্ন ঔষধ দিয়েছি। খুব একটা কাজ হচ্ছে না। কি করব ভেবে পাচ্ছি না।
জেলার কলমাকান্দা উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, ওষুধ কাজ না হওয়ায় ধানখেতে কলাগাছের খোসা দিচ্ছি। সুঁতায় পলিথিন ঝুলিয়ে দিয়েছি এবং খেতে মাচা বানিয়ে তাতে বসে বাদ্য বাজনা করছি। এতে অনেকটাই ইঁদুরকে সরাতে পেরেছি।
জেলার সদর উপজেলার শিবপুর গ্রামের কৃষক মৌলা মিয়া বলেন, কৃষকদের এমন দুঃসময়ে কৃষি বিভাগের লোকজনের তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। তাই কৃষি বিভাগকে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।
জেলার কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শারমিন সুলতানা বলেন, ইঁদুরের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য কৃষকদেরকে ধানের জমিতে বিলি করে দিতে, জমিতে কলাগাছের খোসা দিতে এবং ইঁদুরের গর্তের মুখে কীটনাশক ও গ্যাসের ট্যাবলেট দিতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করি আমরা ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ইঁদুর দমন করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হব।
এ বিষয়ে নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা চন্দন কুমার মহাপাত্র বলেন, প্রায় প্রতি আমন মৌসুমেই ফসলি জমিতে এ রকম ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দেয় এবং কৃষকের কাঁচা ধান কেটে বিনষ্ট করে। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি কৃষক ইঁদুর থেকে অনেকটাই রেহাই পাবে। এছাড়া ইঁদুর নিধনেও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এবং সর্বোচ্চ ইঁদুর নিধনকারীকে পুরস্কৃতও করা হবে।
জিয়াউর রহমান/আরকে