পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লক্ষ্মীপুর শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রায় ২০ জন গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে তাদের সাবেক নারী কর্মী আকলিমা আক্তার শিল্পি গ্রাহকদের দ্বারা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গ্রাহকদের হয়রানির ভয়ে তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে থাকতে পারছেন না। সম্প্রতি তার ঘর মেরামতের সামগ্রীও নিয়ে গেছে গ্রাহকরা। শিল্পি সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী।

রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে জেলা শহরের একতা সুপার মার্কেটের চতুর্থ তলায় বিমা কোম্পানিটির কার্যালয়ে গেলে দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। এসময় বাইরে কোম্পানির নামে কোনো সাইনবোর্ড বা লেখনি দেখা যায়নি।

তবে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক অন্য একটি বিমা কোম্পানির ম্যানেজার বলেন, পদ্মার কার্যালয় বাগবাড়ি এলাকায় ছিল। সেখান থেকে একতা সুপার মার্কেটে এসেছে। কিন্তু তাদের অফিস খুলতে কখনো দেখা যায়নি। তারা অফিস নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কেউই আসে না।  

গ্রাহক ছালেহা বেগম, কহিনুর বেগম, নাজমা বেগম, মনি বেগম ও দেলোয়ার হোসেন জানায়, পলিসি করানোর সময় শিল্পি বলেছেন, টাকা যদি কোম্পানি না দেয় তাহলে তিনি (শিল্পি) দেবেন। এখন তিনি টাকা দিচ্ছেন না। কোম্পানির লোককেও দেখিয়ে দিচ্ছেন না। দুই-একজন কার্যালয় গিয়েও ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। কার্যালয়ে ঠিকানা গেলে দরজায় তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। তাদের মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়। একইভাবে তারাসহ অন্তত ২০ জন গ্রাহক বিপাকে রয়েছেন।

আবুল কাশেম নামে এক গ্রাহক জানান, শিল্পির মাধ্যমেই তার স্ত্রীর নামে একটি পলিসি করা হয়। শিল্পি বাড়িতে থাকে না। এতে তিনি লক্ষ্মীপুর বিমার কার্যালয়ে যান। কিন্তু অফিসের লোকজন চোর। কখনও বাগবাড়ি, কখনও তমিজ মার্কেটে অফিস নিয়ে যায়। তখন স্ত্রীর পলিসি হিসেবে তিনি পুরো টাকা জমা আছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন। তবে টাকা আনতে যাওয়ার সময় অবশ্যই শিল্পিকে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু এখন আবার বিমার অফিস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অফিসের ঠিকানায় গেলে দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়।  

অভিযুক্ত আকলিমা আক্তার শিল্পি বলেন, আমি গ্রাহকদের টাকা নিয়মিত অফিসে জমা দিয়েছি। জমার রশিদ গ্রাহকদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিমার মেয়াদ শেষ হলেও অনেকেই টাকা পাননি। আবার অনেকে জেলা কার্যালয় ও ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে তাদের পলিসি যাচাই করে এসেছেন। সবার টাকা সঠিকভাবেই জমা হয়েছে। যারা বিষয়টি বুঝে না তারা আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। আমি নাকি তাদের টাকা আত্মসাৎ করেছি। আমি বাড়িতে এলেই সবাই আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে। গত বৃহস্পতিবার আমার ঘর মেরামতের নির্মাণ সামগ্রীগুলো নিয়ে যায় কয়েকজন গ্রাহক। পরে ৯৯৯ এ কল দিলে পুলিশ এসে নির্মাণ সামগ্রীগুলো উদ্ধার করে দেয়।

দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) আবুল কাশেম বলেন, গ্রাহকরা কয়েকবার মৌখিকভাবে আমাকে জানিয়েছে। কোম্পানির কাউকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান হওয়া প্রয়োজন। 

এ ব্যাপারে জানতে জেলা শহরের একতা সুপার মার্কেটে লক্ষ্মীপুর কার্যালয় গেলে দরজায় তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। কার্যালয়ের সামনে তাদের নাম সংবলিত কোনো কিছু দেখা যায়নি। তবে দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবু ইউসুফ মোবাইলফোনে একাধিকবার কল ও এসএমস দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। একই কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. মোহনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কোম্পানির ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের দাপ্তরিক নম্বরে কল দিলেও কেউ রিসিভ করেননি।

শাকিল/এমএএস