দিনে ৬০০ কেজি চালের ভাত খায় মাছ!
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা বিল হরিণায় রাস্তার পাশে বড় একটি তাফালে চলছে ২০০ কেজি চালের ভাত রান্নার কর্মযঙ্গ। তবে এ আয়োজন কোনো মেজবানের জন্য নয়। ঘেরে চাষ করা মাছের খাবার হিসেবে চলছে বৃহৎ পরিসরে এ ভাত রান্নার আয়োজন। প্রতিদিন এভাবে তিনবেলায় মোট ৬০০ কেজি চালের ভাত রান্না করে ঘেরে ছিটানো হয়।
যশোরের মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৮০ থেকে ১০০ বিঘা পরিমাণের ঘের তৈরি করে মাছ চাষ করছেন খামারিরা। এসব ঘেরে রুই, কাতলা, সিলভার কাপ, গ্লাসকাপ, মৃগেল, তেলাপিয়া, সরপুটিসহ বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ হয়। গত কয়েক বছর ধরে এসব ঘেরে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ভাত। ভাতের সঙ্গে দেওয়া হয় গমের ভূসি। একেকটি ঘেরে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৬০০ কেজি চালের ভাত রান্না করে মাছকে খেতে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
খামারিদের দাবি ভাত খাওয়ালে উৎপাদন খরচ কম লাগে। সেইসঙ্গে অল্প সময়ে মাছের উৎপাদনও বেশি হয়। এজন্য তারা মাছকে ভাত খাওয়াচ্ছেন। তারা আরও দাবি করেন যে চাল তারা ব্যবহার করছেন তা মানুষের খাওয়ার উপযোগী নয়।
মনিরামপুরের দূর্বাডাঙ্গা গ্রামের মৎস্য খামারি উত্তম অধিকারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ৯০ বিঘা মাছের ঘের। এ ঘেরে সব ধরণের সাদা মাছ রয়েছে। প্রতি এ ঘেরের জন্য ৬০০ কেজি করে চালের ভাত রান্না করা হয়। এরপর নৌকায় করে ঘেরের বিভিন্ন প্রান্তে ভাত ছিটিয়ে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আমরা যে চাল মাছকে খাওয়াই সেটি মানুষের খাওয়ার উপযোগী নয়।
হরিণা গ্রামের আমিনুর রহমান নামে আরেক মৎস্য খামারি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ১০০ বিঘার ঘের। আমার প্রতি বেলায় ২০০ কেজি করে চালের ভাত রান্না করা লাগে। তিন বেলায় ৬০০ কেজি চালের ভাত রান্না করে ঘেরে ছিটাতে হয়। একবার রান্না করতে তিন ঘণ্টা সময় লাগে।
তিনি বলেন, ভাত খাওয়ালে মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে, উৎপাদন খরচও কম হয়। মাছকে একটানা তিন মাস ভাত খাওয়ালে তিন মাসে উৎপাদনে যাওয়া যায়।
এদিকে বিষয়টি অভিনব হলেও মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, মাছকে ভাত খাওয়ানো অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। যশোর জেলা মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যশোরের মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলায় খামারিরা মাছকে ভাত খাওয়াচ্ছে শুনেছি। ভাত হচ্ছে শর্করা। শর্কারা খাইয়ে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব না। আর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ না হলে মাছের উৎপাদনও কম হয়। তাছাড়া মাছকে ভাত খাওয়ালে চালের ওপর এক সময় প্রভাব পড়বে। এজন্য খামামিদের আমরা এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছি।
তিনি আরও বলেন, ভাত কোনো অপদ্রব্য না। ফলে পরামর্শ দেওয়া ছাড়া আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই।
এমএএস