প্যাকিং সার্টিফিকেট ছাড়াই যাচ্ছে ইলিশ, বিএফডিসি যেন ঠুঁটো জগন্নাথ
সঠিকভাবে ইলিশ বাজারজাত করতে মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের কাছ থেকে প্যাকিং সার্টিফিকেট নেওয়া বাধ্যতামূলক। এর মাধ্যমে সরকার যেমন রাজস্ব পায় তেমনি জাটকা পাচারও রোধ করা সম্ভব হয়। অভ্যন্তরীণ বাজারে ইলিশ আনা-নেওয়ার জন্য পরিবহন প্রতি সরকারি এই দপ্তর থেকে সার্টিফিকেট নিতে হয়। একইভাবে রপ্তানির ক্ষেত্রেও প্যাকিং সার্টিফিকেট ছাড়া মাছ পরবিহন সম্ভব নয়।
কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা নেই বরিশালে। আর যে প্রতিষ্ঠানের ওপর দায়িত্ব অর্পিত সেটি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যেন ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকায়।
বিজ্ঞাপন
সরকারের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কীর্তনখোলা নদীর তীরে নগরীর বান্দরোড সংলগ্ন এক একর ২৩ শতাংশ জমির ওপর ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীনে স্থাপন করা হয় বরিশাল মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও পাইকারি মৎস্য বাজার কেন্দ্র (বিএফডিসি)। পুরো অবকাঠামো চালুর পর ২০০৭ সালে পূর্ণাঙ্গভাবে মৎস্য অবতরণ ও বাজারের কার্যক্রম চালু করা হয়। মৎস্য শ্রমিক নেতারা এই বাজার ব্যবস্থাপনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ২০০৯ সালে পোর্ট রোডে চলে যাওয়ার পর থেকে আজ অব্দি পরিত্যক্ত হয়ে আছে কোটি কোটি টাকার এই সম্পত্তি।
বাজার চালু না থাকলেও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন বরিশাল শাখা এখানেই অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনে কর্মরত দুজন জানান, এখান থেকে মাছ প্যাকিংয়ের জন্য প্রস্তুত করা হলে মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা সেই প্যাকেট দেখে তারপরে প্যাকিং সার্টিফিকেট দিতো। প্যাকিং সার্টিফিকেটে উল্লেখ থাকতো একটি ট্রাকে কত কার্টুন মাছ রয়েছে, মাছের আকৃতি কেমন এবং কি কি মাছ রয়েছে। এতে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মাছ পরিবহনে সুবিধা হতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সহজে প্যাকিং সার্টিফিকেট দেখে বুঝতে পারতো কি পরিবহন হচ্ছে।
এসব সার্টিফিকেট কেউ এখন মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন থেকে নিচ্ছে না জানিয়ে ওই দুই কর্মচারী জানান, সরকার নির্ধারিতভাবে প্রতি ট্রাকের প্যাকিং সার্টিফিকেটের অনুকূলে ৩০০ টাকা ফি দিতে হতো। এই সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো মাছ এক বাজার থেকে আরেক বাজার, আবার রপ্তানিনিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোরও রপ্তানি করার এখতিয়ার নেই। কিন্তু মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন থেকে সার্টিফিকেট না নিয়ে কিভাবে তারা মাছ পরিবহন করে তা জানা নেই তাদের।
বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সেখান থেকে মাছ পরিবহনে কোনো যানবাহনেও প্যাকিং সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না। কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, প্যাকিং সার্টিফিকেট নিতে গেলে মাছের বর্ণনা দিতে হয়। তা দিতে অস্বীকৃতি অধিকাংশ আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীর। যে কারণে নিয়ম জানলেও তারা এই সার্টিফিকেট নেন না।
রুবেল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ক্রেতার চাহিদা মত মাছ প্যাকিং করে আমরা ট্রাকে তুলে দেই।
তারেক নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, প্যাকিং সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য আমাদের যেমন এগিয়ে যাওয়া উচিত তেমনি মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনেরওতো এগিয়ে আসা উচিত। তারা যদি কোনো ট্রাক আটকে দিত বা ব্যবসায়ীদের তাগিদ দিত তাহলে আমরা বুঝতাম সার্টিফিকেটের দরকার আছে। তারা কিছুই করে না। আর আমরাও নিয়ম মেনে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।
মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের বরিশাল মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও পাইকারি মৎস্য বাজার কেন্দ্রের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ শিকদার বলেন, প্যাকিং সার্টিফিকেট নেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো ব্যবসায়ীই প্যাকিং সার্টিফিকেট নেন না। মাছ পরিবহনের ক্ষেত্রে তারা এই সার্টিফিকেট কোথায় পান বা আদৌ কোনো সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন কিনা তা জানা নেই। তবে আমি চেষ্টা করছি বরিশাল বিএফডিসিটি পুনরায় চালু করতে। বিএফডিসি চালু হলে সবকিছুই পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বরিশাল বিএফডিসির স্থাপনাগুলো দুটি টাইলস কোম্পানির কাছে গুদাম হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে