চিলাহাটি আইকনিক রেলস্টেশনের উদ্বোধন, ইমিগ্রেশন চালু ডিসেম্বরে
বহুল প্রত্যাশিত চিলাহাটি রেলস্টেশনের আইকনিক ভবন, প্ল্যাটফর্ম, প্ল্যাটফর্ম শেড, ফুটওভার ব্রিজ ও ফাংশনাল ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে চিলাহাটি রেলস্টেশন চত্বরে এসব উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
তবে ভবনটির কাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। অবকাঠামোর কাজ শেষ হলে এই স্টেশন থেকেই উত্তরের মানুষ ভারতে যেতে পারবেন খুব সহজে। একই সঙ্গে স্থলবন্দর চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, নেপাল ও ভুটানের বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে বন্দরটি।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে এখন পঞ্চম ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট চিলাহাটি হলদিবাড়ি রেলপথ। বর্তমানে এই রেলপথে ভারতের সঙ্গে পণ্য ও যাত্রীবাহী রেল চালু রয়েছে। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় রেলযোগাযোগ শুরু হলেও চিলাহাটি স্থলবন্দরটি চালু করা সম্ভব হয়নি।
তবে এখন আর সেই বাধা থাকছে না। ৯০ ভাগ শেষ হয়ে গেছে উত্তরের প্রথম চিলাহাটি রেলস্টেশনের আইকনিক ভবনের নির্মাণকাজ। যা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। ভবনটিতে থাকছে আধুনিক যাত্রী সুবিধার জন্য টিকিট কাউন্টার, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগার এবং রেলওয়ের কার্যক্রম চালানোর জন্য বিভিন্ন বিভাগের অফিস। ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকছে ব্যাংক ও রেস্তোরাঁ।
বিজ্ঞাপন
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইমিগ্রেশন পয়েন্ট। চিলাহাটি হয়ে ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাত্রীরা চলাচল করতে পারবে এই স্টেশন থেকেই। এতদিন মিতালী এক্সপ্রেসে যাতায়াতের জন্য ঢাকা থেকে ইমিগ্রেশন হলেও সেই সুবিধা চিলাহাটি থেকেই পাবেন উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা। এর পাশাপাশি ভারত নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে এই রেলপথটি।
চিলাহাটি বর্ডার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিলাহাটি স্টেশনকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে বাণিজ্য, কর্মসংস্থান এবং আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে আমূল পরিবর্তন আসবে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০৪০ সালের মধ্যে ৫৯টি জেলায় রেলযোগাযোগের আওতায় আনা হবে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিলাহাটির গুরুত্ব যেকোনো জেলার থেকে বেশি। আজকে যেটা উদ্বোধন হলো এখানে যা আছে সেটা কোনো জেলা শহরেও হয়নি। বর্তমান সরকার রেলবান্ধব। বর্তমানে আমাদের প্রায় ৩৮টি প্রকল্প চালু রয়েছে। আমরা পরিকল্পনা করছি আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে ৫৯টি জেলায় রেলকে ছড়িয়ে দিয়ে একই নেটওয়ার্কে নিয়ে আসব। এছাড়া কয়েকটি আছে পাহাড়-পর্বত, এগুলো সম্ভব না। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন রাঙ্গামাটিতেও রেল নিয়ে যাবেন। আপনারা দোয়া করবেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকলে ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবে।
রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ডিসেম্বরে মধ্যে চিলাহাটি স্টেশন থেকে চালু করা হবে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম। এছাড়া এই স্টেশন থেকেই ট্রেন চলবে কক্সবাজার পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বাংলাদেশের চিলাহাটি আর ভারতের হলদিবাড়ী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
২০২১ সালের ২৭ মার্চ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য মিতালী এক্সপ্রেস উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে করোনা ও ভিসাসংক্রান্ত জটিলতায় আটকে যায় মিতালী এক্সপ্রেসের চলাচল। উদ্বোধনের প্রায় দুই বছর পর ২০২২ সালের জুনে চালু হয় যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস।
শরিফুল ইসলাম/এমজেইউ