ভাতের জন্য সন্তান দিয়ে দেওয়া সেই রোজিনা পেলেন পাকা ঘর
দু’মুঠো ভাতের আশায় পেটের সন্তান প্রতিবেশীকে দিয়ে দেন রোজিনা বেগম। খাদ্যভাবে পেটের সন্তান মারা যেতে পারে তাই প্রতিবেশী এক নিঃসন্তান নারীর কাছ থেকে খাবার নেন জন্মের পর সন্তানকে দিয়ে দেওয়ার শর্তে। পরে রোজিনার এমন করুন জীবন নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহাম্মেদ রোজিনার পাশে দাঁড়ান। রোজিনা বেগমকে নতুন পাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
রোববার (৫ নভেম্বর) দুপুরে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের মুন্সীরহাট বেদেপল্লিতে রোজিনা আক্তারকে নতুন ঘরটি হস্তান্তর করা হয়। জীবিকা নির্বাহের জন্য রোজিনাকে মালামালসহ একটি মুদি দোকান তৈরি করে দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
বিজ্ঞাপন
গত ৫ সেপ্টেম্বর অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘দুমুঠো খাবারের জন্য সন্তানকে দিয়ে দেন রোজিনা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর বেদেপল্লিতে গিয়ে জেলা প্রশাসক রোজিনাকে নগদ ১০ হাজার টাকা, বিধবা ভাতা ও তার ছেলে আতিকের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র রোজিনাকে চাল-ডালসহ ২০ দিনের খাবারের ব্যবস্থা করে দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্বামী শিপন মন্ডলের আয়ে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে ভালোই কাটছিল তাদের জীবন। ২০২১ সালে রোজিনা তিন মাসের গর্ভবতী থাকা অবস্থায় মারা যায় স্বামী শিপন মন্ডল। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পরে পরিবারটি। পেটের সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দিয়ে দেওয়ার শর্তে প্রতিবেশী পলি আক্তারের থেকে খাবারের নিশ্চয়তা পায় রোজিনা। জন্মের পর কথা মতো সন্তান পলি আক্তারকে দিয়ে দেন রোজিনা। স্বামীর রেখে যাওয়া চার শতক জমির ওপর একটি ছাপরা ঘরে থাকতেন তারা। ছেলে আতিক ভিক্ষা করে যা পেত তা দিয়ে কোনো মতে দিন চলতো তাদের সংসার।
বিজ্ঞাপন
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রোজিনার কষ্টের কথা গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরে তার স্বামীর রেখে যাওয়া চার শতক জমির ওপর একটি পাকা ঘর তৈরি করে দিয়েছে প্রশাসন। তার ছেলে আতিকের পড়াশোনার ব্যবস্থাও করেছে।
রোজিনা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাংবাদিক ভাই এসে নিউজ করার পর ডিসি স্যার, ইউএনও স্যার এসেছিলেন। তারা আমাকে খাবার ও নগদ টাকা দেন। ডিসি স্যার নতুন পাকা ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। একসময় খাবারের জন্য আমার পেটের সন্তান প্রতিবেশীকে দিয়ে দেই। ডিসি স্যার বলেছেন, ছেলে ভালোভাবে পড়াশোনা করলে চাকরি দেবেন। আমাকে দোকান করে দিবেন। কিছুদিন আগেও ঝুপড়ি ঘরে থাকতাম। এখন পাকা ঘরে থাকব। বিষয়টি আমার কাছে স্বপ্নের মতো। দোয়া করি সাংবাদিক ভাই, ডিসি স্যার ও ইউএনও স্যারের জন্য, তারা যেন এভাবেই মানুষের পাশে থাকতে পারেন।
রোজিনার ছেলে আতিকুর ঢাকা পোস্টকে বলে, অভাবের কারণে স্কুলে যেতে পারিনি। ভিক্ষা করেছি, না খেয়ে থেকেছি। এখন আমি নতুন জামা পরি, স্কুলে যাই। পড়াশোনা করে ভালো মানুষ হতে চাই।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহাম্মেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি নিউজের মাধ্যমে খবর পেয়ে নিজে সরাসরি এসে রোজিনার খোঁজ খবর নেই। তাকে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে একটি নতুন পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। সরকার ও জেলা প্রশাসন সব সময় রোজিনাদের পাশে থাকবে।
রোজিনাকে নতুন পাকা ঘর হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন, শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র, জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. আব্দুর রহিম ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক বিশ্বজিৎ বৈদ্য।
সাইফুল ইসলাম সাইফ রুদাদ/এএএ