সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে ‘সুন্দরবন বাঘ গণনা প্রকল্পের’ আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে বাঘ গণনা শুরু হয়েছে। রোববার (৫ নভেম্বর) দুপুরে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের হাড়বাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রে বাঘ গণনা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুর নাহার তালুকদার। এই জরিপে বাঘের সংখ্যা জানা যাবে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই।

বাঘ গণনা কার্যক্রম উদ্বোধনের সময়, খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো, বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ড. আবু নাসের মহাসিন হোসেন, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা বিভাগের (খুলনা) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নুরুল করিম, চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব ও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবিরসহ বাঘ গণনার কাজে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

এই জরিপ কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে উপমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন বাঁচলে বাঘ বাঁচবে। তাই সুন্দরবন সুরক্ষা করে বাঘ সংরক্ষণ করতে হবে। বাঘ সংরক্ষণের জন্য যা যা করা দরকার আমরা তাই করব। তবে এক্ষেত্রে বনরক্ষী, সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। বাঘ সংরক্ষণের জন্য সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ে বসবাসকারীদেরকে বাঘের গুরুত্ব জানানোর কথাও বলেন তিনি।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের চাঁদপাই এবং শরনখোলা রেঞ্জে ৩০০টি স্টেশনে দুটি করে মোট ৬০০ ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। পরে তা বিশ্লেষণ শেষে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে বাঘের প্রকৃত সংখ্যা তুলে ধরা হবে। ‘বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পে’ এর আওতায় বাঘ গণনার কাজে দুই কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বাকি দুটি রেঞ্জ বাগেরহাটের পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের সাতক্ষিরা ও খুলনা রেঞ্জে ইতোমধ্যে জরিপ কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের এপ্রিল মাসে এই জরিপ কাজ শেষ হবে।

বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. আবু নাসের মহসিন বলেন, সুন্দরবনে বাঘের শিকার প্রাণী বাড়ছে। গত বছর এর সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার। এখন তা বেড়ে দাড়িয়েছে এক লাক ৪২ হাজার। তাই সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বাঘ গণনার বৈশ্বিক যে পদ্ধতি সেটা হলো ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতি। এর মাধ্যমে বাঘের ঘনত্ব নির্ণয় করে বাঘের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়। বাংলাদেশেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করে ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটারের চার হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটারে বাঘ গণনার কাজ চালানো হবে। ক্যামেরার মাধ্যমে বাঘের মুখমণ্ডল ও ডোরা কাঁটার ছাপ উঠে আসবে। এটা জটিল একটা পরিসংখ্যান কাজ। এ কাজ করেই বাঘের সংখ্যা বের করা হবে। 

সুন্দরবনে প্রথম বাঘ জরিপের কাজ শুরু হয় ২০১৩-১৪ সালে। সেই জরিপে ১০৬টি বাঘ সুন্দরবনে আছে বলে জানা যায়। ২০১৮ সালে সর্বশেষ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪টি।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চার মাস ধরে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ ২৯৫টি গ্রিটের মাধ্যমে বাঘ গণনার কাজ শেষ হয়।

শেখ আবু তালেব/এএএ