৪ ঘণ্টার চেষ্টায় বাগে এলো লক্ষ্মী
এক টানা চার ঘণ্টার চেষ্টায় হাতি লক্ষ্মীকে বাগে আনা হয়েছে। চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করার পরে হাতিটির পা লোহার শেকল ও রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর হাতির মালিকদের সেটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে হাতিটিকে বাঁধতে সক্ষম হন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মীরা।
এর আগে বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে হাতির আক্রমণে প্রাণ যায় নাচোলের মুসাব্বির (১২)। বিকেলে তানোরের মুন্ডুমালায় রামপদ নামে এক আদিবাসী যুবকের মৃত্যু হয়। পরে নাচোল থেকে হাতিটি তানোর উপজেলার ধামধুম এলাকায় অবস্থান নেয়। রাতে সেই এলাকা থেকে পালিয়ে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের বাধারী ইউনিয়নের বৌদ্ধপুর এলাকার পুরোনো কবরস্থানে অবস্থান নেয় হাতিটি। ফলে কবরস্থানকে ঘিরে হাতিটিকে দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করে। তাদের সরাতে বেগ পতে হয় স্থানীয় প্রশাসনকে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ভোরের দিতে হাতিটি এই কবরস্থানে আসে। সকালের দিকে হাতিটি কবরস্থানে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। লোকজনের উপস্থিতিতে সে ভেতরে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে যায়। এরপরে ঘটনাস্থলে গ্রাম পুলিশ ও থানা পুলিশ উপস্থিত হয়। তার কয়েক ঘণ্টা পরে আসে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মীরা। তারা নিরাপদ দূরত্ব থেকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করে। হাতিটি ছটফট করতে করতে গাছের কাছে দাঁড়িয়ে যায়। এরপর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মীরা ও হাতির মাহুত (হাতি পরিচালনাকারী) হাতিটিকে বেঁধে ফেলে। পরে স্বাভাবিক করার জন্য হাতিটিকে আবার ইনজেকশন পুশ করা হয়। কিন্তু হাতিটি ঠিকঠাক না বাঁধার করণে রশি ছিড়ে লাফিয়ে ওঠে। তারা দুই ঘণ্টা পরে আবার নিরাপদ দূরত্ব থেকে চেতনানাশক পুশ করে হাতিটিকে। এরপরে তাকে শিকল ও রশি দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে ফেলা হয় কবরস্থানে।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উদ্ধার অভিযানে যোগদান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এছাড়া আগে থেকে স্থানীয় প্রশাসন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের লোকজন কাজ শুরু করেন। এর আগে ভোর থেকে বেশ কয়েক দফা স্থানীয় মসজিদে মাইকিং করা হয়। মাইকিং করে এলাকাবাসীকে সাবধান করা হয় এবং নিরাপদ দূরত্ব থাকতে বলা হয়।
বিজ্ঞাপন
হাতি পরিচালনাকারী মাহুত বলেন, এই হাতিটিকে আমরা লক্ষ্মী বলে ডাকি। হাটিতে বেঁধে ফেলা হয়েছে। তবে এখনো বলা যাচ্ছে না পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে কি না। তবে হাতিটিকে বসে আনতে হলে এখানে তিন থেকে চার দিন রাখতে হবে। এখানে তাকে খাওয়া দাওয়া করানো ছাড়াও যত্ন নিতে হবে। এরপরে সুবিধাজনক সময়ে হাতিটিকে নিয়ে যাওয়া হবে।
হাতির দায়িত্বে থাকা মিল্লাত বলেন, হাতিটি কাউকে আক্রমণ করতে যায়নি। মানুষ তার কাছে যাওয়ার কারণে হাতি মনে করেছে তাকে আক্রমণ করবে। তাই হাতি তাদের আঘাত করেছে। এই হাতিটির বয়স অনুমানিক ৩৫ থেকে ৪০ বছর। তার তিনটা বাচ্চা আছে। একটা বাচ্চা তার সাথেই ছিল। বাকি বাচ্চাগুলো চট্টগ্রামে রয়েছে।
রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, চেতনানাশক ইনজেকশন দেয়া হয়। এরপরে হাতিটি রশি ও লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা হয়েছে। এখানে রাতে থাকবে। এরপরে মালিকরা হাতিটিকে নিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে তানোরের বাধাইর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, হাতিটি রাত থেকে এখানে রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের লোকজন হাতিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ধরতে পেরেছে। হাতি ধানের জমি ও কবরস্থানে তাণ্ডব চালিয়েছে। হাতিটি ধরা পড়ায় এই এলাকার মানুষ এখন অনেকটাই নিরাপদ বোধ করবে।
এ বিষয়ে তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন বলেন, সকাল থেকে উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়। মোটামুটি আমরা একটা পর্যায়ে পৌঁছে গেছিলাম। একটু দুর্ঘটনাবসত আবার উদ্ধার অভিযান বিলম্ব হয়। তবে পরবর্তীতে হাতিটি ধরা সম্ভব হয়। আমরা স্থানীয়দের অনুরোধ করেছি তারা যেন হাতিটিকে বিরক্ত না করে। সুবিধামতো সময়ে হাতিটিকে নিয়ে চলে যাবেন মালিকরা।
শাহিনুল আশিক/আরএআর