ছুটে চলল ট্রেন, রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে হাজারো মানুষের অভিবাদন
কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন থেকে রামুর উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া ট্রেনটি শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে অতিক্রম করেছে। এ সময় হাজারো মানুষ রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানান।
সবাই প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ও নেচে গেয়ে ট্রেন চলাচল উদযাপন করেন। এর আগে দুপুর ১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহন করা ট্রেনটি রামুর রেলস্টেশনের দিকে রওনা হয়।
বিজ্ঞাপন
সকাল থেকে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়ায় অবস্থান করে দেখা যায়, প্রথমবারের মতো দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে লাল সবুজ ট্রেনটি আইকনিক রেলস্টেশন থেকে রামুর উদ্দেশ্যে রওনা করে। এ সময় ট্রেন দেখতে পেয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়ে হাজারো কক্সবাজারবাসী। স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে আইকনিক স্টেশন প্রাঙ্গণ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিল ও স্লোগান থামলেও হাজার হাজার মানুষ অবস্থান নেন কক্সবাজার রেলস্টেশনে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আসা ট্রেনটির সামনে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা জানান, এই রেললাইনের মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন আসবে পর্যটন শিল্পের। তাদের শত বছরের চাওয়া পূরণ হয়েছে। আজ যেন তাদের ঈদের দিন।
কক্সবাজার কলাকলীর বাসিন্দা এখলাস বলেন, সকাল ৯টা থেকে চান্দেরপাড়ায় অপেক্ষা করছি প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা ট্রেন দেখার জন্য। এটি দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। আমি ছবিও তুলেছি।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের ছাত্র খায়রুল আমিন বলেন, টেলিভিশনে শুনেছি ১৯টি বগি নিয়ে একটা লম্বা ট্রেন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যাবে সেটি দেখতে আসছি। অনেক ভালো লাগছে। যদি চড়তে পারতাম তাহলে আরও ভালো লাগতো।
ইউনুছ নামক এক ছাত্র নেতা বলেন, আজ আমাদের স্বপ্নের ট্রেন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আজ আমরা আনন্দিত।
এর আগে শনিবার (১১ নভেম্বর) সকাল পৌনে ১১টার দিকে কক্সবাজার রেলস্টেশনে উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মঞ্চে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। তিনি কক্সবাজার দোলহাজারী রেল প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর অতিথিদের নিয়ে আইকনিক রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে ও পতাকা উড়িয়ে হুইসেল বাজান। তারপর প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে চড়ে রামু পর্যন্ত ভ্রমণ করেন।
এরপর রামু থেকে হেলিকপ্টারে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেলের উদ্বোধন এবং ১ম টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতারবাড়ি টাউনশিপ মাঠে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন এবং মাতারবাড়ি ১২শ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
তবে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। শুরুতে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে। এছাড়া একটি মেইল ট্রেন দোহাজারী পর্যন্ত চলাচল করলেও সেটি পরে কক্সবাজার পর্যন্ত আনা হবে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে।
এদিন প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। যার মধ্যে রেলসহ ১৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। সে লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবশেষ ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার আসেন। আর প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রয়াসে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ৯৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বদলে যাচ্ছে কক্সবাজার।
আরকে