স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আপনারা (বিএনপি) অগ্নিসন্ত্রাস করছেন। মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছেন। প্রতিষ্ঠান পুড়িয়েছেন। মানুষকে কষ্ট দিয়েছেন। আজও আপনারা (বিএনপি) কষ্ট দিচ্ছেন। আজও আপনারা অবরোধ করছেন, জ্বালাও-পোড়াও করছেন। বাস-গাড়ি পুড়াচ্ছেন, পুলিশ হত্যা করছেন, মানুষ হত্যা করছেন। হত্যা করে পুড়িয়ে কখনও ক্ষমতায় আসা যাবে না। ক্ষমতায় আসতে হলে ভোটের মাধ্যমে আসতে হবে। আপনারা (বিএনপি) তো ভোটে বিশ্বাস করনে না, আপনাদেরকে ভোট দিয়েছিল, আপনারা (বিএনপি) দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন।

শনিবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ প্রাঙ্গণে জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য খাতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক(আরডি) নির্বাচিত হওয়ায় মানিকগঞ্জে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।  

জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের বিরোধী যারা আছেন, আপনারা কি দিয়েছেন। আপনারা (বিএনপি) পেছন দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চান। আপনারা স্বাধীনতার সময় বিরোধীতা করেছেন, রাজাকার-আলবদর সৃষ্টি করেছেন। দেশকে আপনারা মুক্তি লাভ করতে দেন নাই, দুই লাখ মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। আপনারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছেন। সিরিজ বোমা, গ্রেনেড হামলা আপনারাই (বিএনপি) করেছেন। বিদ্যুৎতে, সারে চুরি করেছেন। 

মন্ত্রী বলেন, মানিকগঞ্জবাসী আওয়ামী লীগ, নৌকা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন। আপনাদের ভোটে তিনবার এমপি, প্রধানমন্ত্রীর আস্থা অর্জন করে দুইবার মন্ত্রী হয়েছি। বিগত পাঁচটি বছর আমরা আপনাদের নিয়ে কাটিয়েছি। আপনারা জানেন, করোনার সেই মৃত্যুর কষ্ট, যন্ত্রণা নিয়ে আমরা কাজ করেছি, অনেক সুখের দিকও ছিলও তবে দিনগুলো সবসময় সুখকর ছিল না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমরা এলাকার, মানিকগঞ্জসহ সারাদেশের কাজ হাতে নিয়েছি। কখনই বলি নাই, আমরা কি করতে সক্ষম হয়েছি। কখনও বলার সুযোগ হয়নি। পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য বিভাগে বিপুল উন্নয়ন হয়েছে। সারাদেশের সকল সরকারি হাসপাতালে ৪০ হাজার বেড ছিল, যা ৭০ হাজার বেডে উন্নতি করা হয়েছে। দেশে দশটি নতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। এ ছাড়া ক্যান্সার, কিডনি ও হার্টের জন্যে দেশের আটটি বিভাগে আটটি হাসপাতাল হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে মাত্র ৩০০ আইসিইও ছিল। করোনার সময় বেহাল অবস্থা ছিল আপনারা জানেন। বিভিন্ন পর্যায়ে সারাদেশে সেই আইসিইও বর্তমানে ১৫০০ হয়েছে। জেলা পর্যায়ে কোনো আইসিইও, ডায়ালাইসিস ছিল না, কিন্তু এখন প্রতিটি জেলায় ১০ বেডের আইসিইও এবং ১০ বেডের ডায়ালাইসিস করেছি আমরা। এটাই দেশের প্রথম উদ্যোগ। বাংলাদেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য সিট (আসন) ছিল তিন হাজার। বিগত ৫০ বছরেও এই সিট সংখ্যার বৃদ্ধি হয়নি, কিন্তু আমি পাঁচ বছরে সরকারি সকল মেডিকেল কলেজে সিট সংখ্যা ৭০ ভাগ বৃদ্ধি করে আড়াই হাজার সিট সংখ্যা বৃদ্ধি করেছি। বর্তমানে দেশের সকল সরকারি মেডিকেল কলেজে সাড়ে পাঁচ হাজার সিট সংখ্যা রয়েছে। যেখানে আপনাদের ছেলে-মেয়েরা বিনা পয়সায় লেখাপাড়ার সুযোগ পাচ্ছে।

জাহিদ মালেক বলেন, আজকে আপনারা আমাকে যে সংবর্ধনা দিলেন, এজন্য আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। যে জন্য আমাকে সংবর্ধনা দিলেন তার শুরুটা হয়েছিল তিন বছর আগে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের প্রায় ২০০ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে মনোয়ন দিয়েছিলেন। আমরা এই তিন বছর একাধারে খেটেছি, প্রধানমন্ত্রী নিজে খেটেছেন, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খেটেছে। সকলে মিলে আমরা একযোগে কাজ করেছি। গত দুই সপ্তাহ আগে ভারতের দিল্লীতে ডব্লিউএইচও আঞ্চলিক সম্মেলনে নির্বাচন হয়। সেখানে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে আটটি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক (আরডি) নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিপক্ষ ভোট পেয়েছে মাত্র দুইটি। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি। এর আগে এই পদে বাংলাদেশ থেকে কেউ নির্বাচিত হতে পারেনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনু্ষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ ফটো, যুগ্ম সম্পাদক সুলতানু আজম খান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইসরাফিল হোসেনসহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিকলীগ, ছাত্রলীগসহ দলের সকল অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সোহেল হোসেন/এমএএস