মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়াম

আগামীকাল রোববার (১২ নভেম্বর) নরসিংদীতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে পুরো নরসিংদীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সাত স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রীকে বরণে সার্বিক প্রস্তুত নিয়েছে নরসিংদীবাসী। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে নরসিংদীর পলাশে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ইউরিয়া সার কারখানা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এরপর তিনি পলাশে সুধী সমাবেশসহ জেলা শহরের মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে জনসভায় যোগ দেবেন। 

দীর্ঘ ১৯ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে নরসিংদীবাসী। এর আগে তিনি সর্বশেষ নরসিংদী এসেছিলেন ২০০৪ সালের ২২ এপ্রিল। সে সময় তিনি বিরোধী দলের নেতা হিসেবে নরসিংদীর মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তিনি নরসিংদীতে আসছেন সরকার প্রধান হিসেবে। তাই নরসিংদীবাসীর চাওয়া-পাওয়া ও প্রত্যাশা এবার বেশিই। 

কৃষি ও শিল্প সমৃদ্ধ জেলা নরসিংদীর বাসিন্দারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও আধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণের জোর দাবি রাখবেন বলে জানা গেছে। জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দেবেন- এমনটাই আশা জেলার ২৪ লাখ মানুষের।

নরসিংদী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে উন্নয়নের যে বিপ্লব ঘটিয়েছেন নরসিংদী তার বাইরে নয়। তিনি নরসিংদীর পলাশে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সার কারখানা নির্মাণ করেছেন। নরসিংদী বিসিক শিল্প নগরী সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বেলাবোতে আরেকটি শিল্প নগরী স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। একইসঙ্গে নরসিংদীবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি- বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং কৃষকদের উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের বিষয়ে অবগত আছেন তিনি। আশা করি জনসভার মঞ্চ থেকে নরসিংদীবাসীর দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার হিসেবে পূরণের ঘোষণা দেবেন।

এদিকে দীর্ঘ ১৯ বছর পর দলীয় সভানেত্রীর নরসিংদী আগমন উপলক্ষে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও জেলা আওয়ামী লীগ।   

সকালে প্রধানমন্ত্রী নরসিংদীর পলাশে উপস্থিত হয়ে ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সারকারখানা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। পরে সেখানে সুধী সমাবেশে বক্তব্য শেষে বিকেলে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন নরসিংদীর মোসলেহ উদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায়। এ উপলক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। প্রায় শেষ হয়েছে মঞ্চ তৈরির কাজ।

ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সারকারখানা প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির মেয়াদের দুই মাস আগেই শেষ হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ পরিবেশবান্ধব ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সারকারখানার নির্মাণ কাজ। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক সার উৎপাদন কার্যক্রমও সম্পন্ন করেছে কারখানাটি। দৈনিক ২৮০০ মেট্রিক টন ও গড়ে বছরে ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে কারখানাটিতে।

নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেন বলেন, মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়াম মাঠে ৫০ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতা হলেও জনসভাকে ঘিরে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দীর্ঘ ১৯ বছর পর দলীয় সভানেত্রীকে সরাসরি দেখার সুযোগ হওয়ায় আনন্দিত নেতাকর্মীরা। 

পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা। দায়িত্ব পালন করবে সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে নরসিংদীকে সাত স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম জানান, ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা উদ্বোধনের পর জনসভায় নরসিংদী জেলায় নবনির্মিত ও সমাপ্ত  ১০টি প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ৮টি শিক্ষা সংক্রান্ত এবং বাকি দুটি প্রকল্পের একটি স্থানীয় সরকার বিভাগ ও আরেকটি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন সংক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমাদের সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

তন্ময় সাহা/আরএআর