নাজমা আক্তার (২১) ও মো. রাসেল (২৫) দম্পতির পাঁচ বছরের সংসার জীবনে রয়েছে তিন বছরের ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। তবে যৌতুকের টাকার জন্য প্রায় নাজমাকে মারধর করতেন রাসেল। শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় নাজমার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেন স্বামী রাসেল। দুপুরে বেগমগঞ্জ উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুজাহিদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

রোববার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ ঘটনায় নাজমার স্বামী, দেবর, শ্বশুর-শাশুড়িকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন বিচারিক আদালত। এরপর নাজমার বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে।

কারাগারে প্রেরণকৃতরা হলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুজাহিদপুর গ্রামের নাজমার স্বামী রাসেল, দেবর মামুন (২৬), শ্বশুর ফখরুল ইসলাম (৬৫) ও শাশুড়ি ছবুরা বেগম (৫৫)।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বেগমগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক স্পেস ল্যাব চৌধুরী প্রমোজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসামি রাসেল তার বাবা-মা ও ভাইয়ের প্ররোচনায় স্ত্রী নাজমা বেগমের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে। যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আসামিরা ভুক্তভোগীকে মারধর করে জখম করে। মারধরের একর্যায়ে আসামি মো. রাসেল হত্যার উদ্দেশ্যে ভুক্তভোগীর শরীরে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনে ভুক্তভোগীর শরীরের প্রায় ২৫ শতাংশ ঝলসে গেছে। ভুক্তভোগী বর্তমানে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, নোয়াখালীতে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে।  

ভুক্তভোগীর বাবা মো. ইউসুফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত রাসেলকে কয়েক দফায় বিভিন্ন কাজে ২ লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া হয়েছে। গত ৬ নভেম্বর সিএনজিচালিত অটোরিকশার কাগজপত্র নবায়ন করতে টাকা দাবি করেন রাসেল। বাবার বাড়ি থেকে শনিবার সকালে টাকা না নিয়েই স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসেন নাজমা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শনিবার দুপুরে ঘরের আসবাবপত্র ভাঙতে থাকেন রাসেল। নাজমা তাকে বাধা দিতে গেলে রাসেল তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে নাজমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নিভিয়ে নাজমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। দেবর, শ্বশুর-শাশুড়ি ঘটনার সময় ঘরে থাকলেও তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি।

বেগমগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছি। আদালত তাদের কারাগারে প্রেরণ করেন। এ 
ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়েছে। 

হাসিব আল আমিন/আরকে