রংপুরে বাসদের জনসভা
‘চারটি ছাড়া বাকি সব সংসদ নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ’
স্বাধীনতাপরবর্তী বিগত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে চারটি নির্বাচন ছাড়া বাকি সব নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল বলে অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতারা। দলটির নেতারা মনে করছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই সংসদ ভেঙে দিয়ে তদারকি সরকারের অধীনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে বাসদের ৪৩তম ও মহান রুশ বিপ্লবের ১০৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় বাসদ নেতারা এ অভিযোগ তুলে ধরেন। এর আগে বাসদ রংপুর জেলা কমিটির উদ্যোগে নগরীর শাপলা চত্বর থেকে লাল পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুন সম্বলিত একটি বিশাল শোভাযাত্রা বের করা হয়।
বিজ্ঞাপন
বাসদ রংপুর জেলার আহ্বায়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সদস্য ও বগুড়া জেলার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম পল্টু, দিনাজপুর জেলা আহ্বায়ক কিবরিয়া হোসেন, কুড়িগ্রাম জেলার আহ্বায়ক ফুলবর রহমান, রংপুর জেলা বাসদের সদস্য সচিব মমিনুল ইসলাম, মিঠাপুকুর উপজেলার সমন্বয়ক আতিয়ার রহমান, রংপুর জেলার সদস্য অমল সরকার, ছাত্রফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সভাপতি রিনা মুরমু প্রমুখ।
বিজ্ঞাপন
বাসদ কেন্দ্রীয় সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বিগত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাতটি দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর চারটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হয়েছে। এই চারটি নির্বাচন আপেক্ষিক অর্থে নিরপেক্ষ হলেও দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বাসদসহ বাম গণতান্ত্রিক জোট মনে করে দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। আমরা অবিলম্বে সংসদ ভেঙে দিয়ে তদারকি সরকারের অধীনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি করছি।
জনসভায় কেন্দ্রীয় সদস্য সাইফুল ইসলাম পল্টু বলেন, আজ পুঁজিবাদী দুঃশাসন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যারা উৎপাদন করে এই দেশকে টিকিয়ে রাখছে তারা কোনোভাবেই আর টিকে থাকতে পারছে না। কৃষকরা উৎপাদন করছে অথচ খরচ তুলতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমজীবী গরিব মানুষ দিশেহারা। ঋণনির্ভর অযাচিত মেগাপ্রকল্প ও ঘুষ-দুর্নীতি বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশে শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবা গরিব মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আঞ্চলিক বৈষম্যের কারণে খাদ্যভাণ্ডার হওয়া সত্ত্বেও বৃহত্তর রংপুরে নেই কোনো কলকারখানা। নদীভাঙন, বন্যা ফসলহানিতে বেকার সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় এই নগরে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দলের অন্য নেতারা বলেন, সারা বিশ্বে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল কর্তৃক নির্মম অত্যাচার ও উচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে, কিন্তু জাতিসংঘসহ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানসমূহ তা বন্ধ করতে পারছে না। আজ যদি সমাজতান্ত্রিক শক্তিশালী বলয় থাকত তাহলে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী এমন সাহস পেত না। আজ দেশের অভ্যন্তরেও সরকারের অনমনীয় ও আগ্রাসী দমন-পীড়ন নীতির কারণে বিদেশিরা হস্তক্ষেপের শক্তি ও সুযোগ খুঁজছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ