বগুড়ার সাত আসনে নৌকার মাঝি হলেন যারা
বাঁ থেকে সাহাদারা মান্নান, তৌহিদুর রহমান মানিক, সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, হেলাল কবিরাজ, মজিবর রহমান মজনু, রাগেবুল আহসান রিপু, ডা. মোস্তফা আলম নান্নু
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। রোববার দুপুরে বগুড়ার সাত আসনে নৌকার কাণ্ডারিদের নাম ঘোষণা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বগুড়ার-১ (সারিকান্দি-সোনাতলা) আসনে মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন সাহাদারা মান্নান। আসনটিতে আমৃত্যু সংসদ সদস্য ছিলেন তার স্বামী আব্দুল মান্নান। তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২০০৮ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও এমপি নির্বাচিত হন তিনি। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আব্দুল মান্নান। এরপর আসনটিতে উপনির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ সদস্য হিসেবে স্বামীর স্থানে আসেন সাহাদারা মান্নান। এর আগে থেকেই সাহাদারা মান্নান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৫ হাজার ১০৯ জন।
বিজ্ঞাপন
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে নৌকার মাঝি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন তৌহিদুর রহমান মানিক। তিনি বিগত সময়ে শিবগঞ্জ পৌরসভার পরপর দুবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৪ সালে আসনটি আওয়ামী লীগের জোটের শরিক জাতীয় পার্টির হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে সময় আসনটিতে সংসদ সদস্য হন জাতীয় পার্টির নেতা শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও শরিফুল ইসলাম সংসদ সদস্য হন। এ আসনে ৩ লাখ ২৬ হাজার ১৮৬ ভোটার রয়েছেন।
বগুড়া-৩ আসনে এবার নৌকা নিয়ে লড়ার দায়িত্ব পেয়েছেন সিরাজুল ইসলাম খান রাজু। ২৭ বছর আদমদীঘি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে গত ১০ বছর ধরে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ ছাড়া ২০২০ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বেও আছেন সিরাজুল ইসলাম। এর আগে ২০০৮ সালে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আব্দুল জলিলের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আসনটিতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের জোটের শরিক জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদার দায়িত্বে ছিলেন। আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২২ হাজার ১৬৭ জন। ভোটকেন্দ্র থাকবে ১১৭টি।
বিজ্ঞাপন
১৯৮৬ সালে সীমানা পরিবর্তন করে কাহালু ও নন্দীগ্রাম দুই উপজেলা নিয়ে বগুড়া-৪ আসন গঠন করা হয়। গত দুই দশক ধরে আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বঞ্চিত হয়ে আছে। তাদের হয়ে জোটের অন্য শরিক জাসদের বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি রেজাউল করিম তানসেন নির্বাচন করেন। কিন্তু তিনি খুব একটা ভালো করতে পারেননি। শুধু ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় জয়লাভ করেন তিনি। কিন্তু পরে ২০১৮ সালে নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী মোশারফের কাছে হেরে যান তানসেন। আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে আসনটির মনোনীত প্রার্থী হলেন কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল কবিরাজ। তিনি কাহালু পৌরসভার সাবেক মেয়র। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৪।
বগুড়া-৫ আসনে এবার একটু চমক দেখা গেছে। ২০০৮ সাল থেকে নিয়মিত নির্বাচিত হয়ে আসা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবর রহমানকে এবার পরিবর্তন করা হয়েছে। তার পরিবর্তে আসনটিতে এবার নৌকার মাঝি করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজনুকে। তিনি দীর্ঘদিন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে বগুড়ার আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মমতাজউদ্দিনের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালে মজিবর রহমান মজনু সভাপতি হন। তিনি বর্তমানে শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। বগুড়া-৫ আসনটিতে মোট ৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৮ জন।
বিএনপির নিজের ঘরের আসন হিসেবে স্বীকৃত বগুড়া-৬ আসনে চলতি বছরে ফেব্রুয়ারিতে রাগেবুল আহসান রিপু নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বাদশ নির্বাচনেও ফের তাকেই মনোনীত করেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
১৯৭৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব কটি জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে জিতেছে বিএনপি। ২০১৪ সালে বিএনপি আগেই ভোট বর্জন করেছিল। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মির্জা ফখরুলের প্রাপ্ত ভোটের হার ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। এই নির্বাচনে শপথ না নেয়ায় ২০১৯ সালে আবার বগুড়া-৬ আসনে উপনির্বাচন দেওয়া হয়। সেই নির্বাচনে ধানের শীষের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পান গোলাম মো. সিরাজ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকা প্রতীকের টি জামান নিকেতা। পরবর্তীতে বিএনপির নেতারা সংসদ বর্জন করলে আসনটিতে আবার উপনির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ভোটে বগুড়া ৬ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে রাগেবুল আহসান রিপু ৪৯ হাজার ৩৩৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। বগুড়া-৬ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৮ হাজার ৪২।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়ার বাড়ি খ্যাত বগুড়া-৭ আসনটিতেও বিগত সময়ে জোটের শরিক জাতীয় পার্টির মনোনীত ব্যক্তি সংসদ সদস্য ছিলেন। এবার আসনটিতে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান ডা. মোস্তফা আলম নান্নু। ডা. মোস্তফা আলম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করেন। তিনি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুবার সিনেট সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া বিএমএর বগুড়া জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
২০০৮ সালে বগুড়ার ৬, ৭ ও ফেনী-১ আসনে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু দুটি বেছে নেওয়ার কারণে বগুড়া-৭ আসনটি শূন্য হয়ে পড়ে। এজন্য ২০০৯ সালে আসনটিতে উপনির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির মওদুদ আহমেদের বিপরীতে নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মোস্তফা আলম নান্নু। এ আসনের মোট ভোটার ৫ লাখ ১২ হাজার ২৫৮।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী- নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে গত ১৮ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত চার দিনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ৩ হাজার ৩৬২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে দলটির আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/এএএ