‘ভাবির পুরো শরীরে আগুন জ্বলছিল’
‘সুমাইয়া ভাবি চিৎকার দিয়ে বলছিল- ‘ভাইয়া-আম্মা-ভাইয়া, আমারে বাঁচাও, আমি জ্বইলা যাইতাছি। আমারে বাঁচাও, আমি জ্বইলা যাইতাছি’। উঠে দেখি আগুনে পুরো ঘর লাল হয়ে গেছে। দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই ভাবি লাফ দিয়ে উঠানে পড়েন। তার পুরো শরীরে আগুন জ্বলছিল। আমার ভাতিজা আবদুর রহমানের গায়েও আগুন জ্বলছিল। তখন পাশে থাকা একটি কলসি থেকে তাদের গায়ে পানি ঢেলে দিই। আমার আরেক ভাই এসে ভাবির গায়ের ওপর একটি পাটের বস্তা ছুড়ে মারে।’
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুরে বসতঘরে স্বামী কামাল হোসেনের দেওয়া আগুনে অগ্নিদগ্ধ সুমাইয়া আক্তারের (৩৪) ননদ শিউলি আক্তার। দগ্ধ অবস্থায় সুমাইয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় তার মেয়ে আয়েশা আক্তার (৭) ও ছেলে আবদুর রহমান (৩) আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে।
বিজ্ঞাপন
শিউলি বলেন, কামাল ভাই যখন পেট্রল নিয়ে আসে আমরা মনে করেছি তা সয়াবিন তেল। এর আগেও তিনি বাড়িতে আসেন। পরে ফোন পেয়ে বের হয়ে যান। ফেরার সময় পেট্রলের বোতল নিয়ে আসেন। সারারাতই তিনি বাড়িতে-বাইরে আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। কিন্তু কারো সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। তার কোনো সাড়াশব্দও ছিল না। রাত প্রায় আড়াইটার দিকে আমরা ঘুমাতে যাই। এতে দ্রুত সময়ে চোখে ঘুম চলে আসে। পরে আমার ভাবি সুমাইয়ার চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে যায়। ভাবির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। ভাবি বাঁচবে কি না তা আল্লাহ ভালো জানেন। আমার ভাই কামাল ভাবির ওপর অনেক অত্যাচার করেছে।
কামালের ভগ্নিপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, কামাল ভাই সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে তার স্ত্রীকে ছেলে-মেয়েসহ ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। তিনি ঘরে আগুন দেবেন বলে জানান। এর আগে তিনি ছেলে আবদুর রহমানকেও মারধর করেন। কিন্তু তাদের মধ্যে কি হয়েছে তা আমরা জানি না। পরে তিনি তেলের বোতল নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান। ফেরার সময় তেলের বোতলটি হাতে ছিল। আমরা মনে করেছি- খাবার তেল (সয়াবিন) এনেছেন। তিনি যে পেট্রল নিয়ে এসেছেন, তা আমরা বুঝতে পারিনি। ঘরে কিছুক্ষণ থেকে ফের তেলের বোতলটি নিয়ে বের হয়ে যান। ঘটনার সময় সুমাইয়া ভাবির চিৎকার শুনে আমরা ঘুম থেকে উঠে দেখি পুরো ঘরে আগুন জ্বলছে। আগুনের কারণে যথা সময়ে তার মেয়ে আয়েশাকে ঘর থেকে বের করতে পারিনি। সে ঘরের ভেতরই মারা গেছে। ছেলেটি ঢাকায় হাসপাতালে মারা গেছে।
বিজ্ঞাপন
বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. নুরনবী বলেন, কামাল নেশাগ্রস্ত। সে ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়েছে। তার দেওয়া আগুনে ছেলে-মেয়ে পুড়ে মারা গেছে। তার স্ত্রী ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মফিজ উদ্দিন বলেন, কামালকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভোররাতের দিকে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বশিকপুর গ্রামের পুরান চতইল্লার বাড়িতে কামাল ঘরের ভেতর পেট্টোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে ঘুমন্ত স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে রেখেই তিনি বের হয়ে বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে দেন। আটক কামাল একই বাড়ির আমিন উল্লাহর ছেলে ও পেশায় অটোরিকশা চালক।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর