কেউ তুলছেন ছবি, কেউ তুলছেন সেলফি। কেউ আদর করছেন আবার কেউ খাবার খাওয়াচ্ছেন। যেন আনন্দের শেষ নেই। তবে যাকে নিয়ে সবাই এত ব্যস্ত সে হলো একটি হরিণ। নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপে এটি একটি চিরচেনা দৃশ্য। পর্যটকদের খেলার সাথী এই মায়াবী হরিণের নাম ‘বিজলী’।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে নিঝুমদ্বীপের ছোয়াখালী এলাকায় থেকে আহত অবস্থায় একটি হরিণ উদ্ধার করে বনবিভাগ। পরবর্তীতে চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তোলে। তার নাম রাখা হয় ‘বিজলী’। বনবিভাগের মায়ায় বিজলী বনে ফিরে গেলেও মাঝেমধ্যে চলে আসে লোকালয়ে। পর্যটকদের আদর ভালবাসা পেয়ে দিন দিন তার লোকালয় ভালো লেগে উঠেছে।  

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক ইফতেখারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কি সুন্দর মায়াবী হরিণ বিজলী। আমরা তাকে আদর করলাম এবং খাবার খাওয়ালাম। সে আমাদের কাছে অনেকক্ষণ ছিল। আমাদের কাছে কি যে ভালো লেগেছে তা বলে শেষ করা যাবে না।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিঝুমদ্বীপে ঘুরতে আসা রাশেদ রহমান সুহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, হরিণ দেখতে পারা সত্যিই সৌভাগ্যের। নিঝুমদ্বীপে আমাদের সামনে দিয়ে একদল হরিণ লাফিয়ে পার হয়েছিল। আমরা ভালো করে দেখতে পারিনি তবে বিজলীকে দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি। তার সঙ্গে ছবি তুলেছি এবং চিপস খাইয়ে দিয়েছি। এটা যেন আমার ভ্রমণটাই স্বার্থক করলো। 

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতে অনেক পর্যটক আসে নিঝুমদ্বীপে ঘোরার জন্য। তারা যখন বনবিভাগের হরিণটাকে স্পর্শ করতে পারে খুব আনন্দিত হয়। তারা হরিণের সঙ্গে ছবি তোলে এবং আনন্দ করে। এই হরিণটা পর্যটকদের খেলার সাথী হিসেবে পরিচিত। 

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কেফায়েত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিজলীকে বনবিভাগ আদর যত্নে সুস্থ করেছে। তারপর থেকে সে লোকালয়ে থাকে। পর্যটকরা যখন আসে সে তখন পর্যটকদের পেছনে পেছনে হাঁটে। পর্যটকরা বিভিন্ন খাবার খাওয়ায় বিজলী তা খায়। পর্যটকরা তার সঙ্গে ছবি তুলে আনন্দ পায়। 

উপকূলীয় বনবিভাগ হাতিয়ার জাহাজমারা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা এস এম সাইফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিঝুমদ্বীপের ম্যানগ্রোভ বাগানে হরিণ দেখতে সারাদেশ থেকে পর্যটক আসে। অনেকে দেখতে পারে আবার অনেকে দেখতে পারে না। যারা দেখতে পারে তারা খুব খুশি হয় আর যারা পায় না তারা নিরাশ হয়। আসলে হরিণ শব্দ পেলে সে নিরাপদ দূরত্বে চলে যায়। ২০১৭ সালে আহত অবস্থায় একটা হরিণের বাচ্চাকে আমরা ছোয়াখালী এলাকা থেকে উদ্ধার করি। তারপর বনবিভাগের অফিসে রেখে সুস্থ করে তুলি। তার নাম দেই বিজলী। এছাড়া আমরা অনেক হরিণকে সুস্থ করেছি যাদের নামও আমরা দিয়েছি। যেমন রাজা রানী নামের দুইটা হরিণকে আমরা সুস্থ করেছি। যদিও তারা বনে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। কিন্তু বিজলী লোকালয়ে থেকে গেছে। মানুষের বাড়িতে যায়, দোকানে যায়। পর্যটকরা তার সঙ্গে আনন্দ করে। দিন দিন বিজলী খেলার সাথী হয়ে উঠেছে। 

হাসিব আল আমিন/আরকে