তৃণমূল বিএনপির ১৭ প্রার্থীরই নির্বাচনের কোনো অভিজ্ঞতা নেই!
বরিশাল-৩ আসন (সংসদীয় আসন ১২১) থেকে তৃণমূল বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করছেন শাহানাজ হোসেন। তিনি বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের কাছে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন শাহানাজ। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংরক্ষিত আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। কিন্তু তিনবারই দল থেকে প্রত্যাখাত হন তিনি।
শাহনাজ হোসেন বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি মৌখিকভাবে। আমি মূলত আওয়ামী লীগের রাজনীতির লোক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসব মুখর ও অংশগ্রহণমূলক করতেই তৃণমূল বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে এসেছেন বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কথা হয় এই প্রার্থীর সঙ্গে। শুধু শাহানাজ হোসেন নয় বরিশাল বিভাগের ২১ আসনের অনুকূলে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন এই প্রতিবেদক। এরমধ্যে ১৭ জনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। দুইজন মুঠোফোন কল রিসিভ না করায় স্থানীয়ভাবে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমুর ঝালকাঠি ২ ও প্রধানমন্ত্রীর ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বরিশাল ১ আসনে মনোনয়ন না দেওয়ায় পরিসংখ্যান ১৯ জনে সীমাবদ্ধ করতে হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তৃণমূল বিএনপি মনোনীত মোট প্রার্থীর মধ্যে মাত্র দুইজনের নির্বাচনের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। বাকি ১৭ জন প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছেন। ওই দুইজনের মধ্যে বরগুনা ২ আসন থেকে কামরুজ্জামান লিটন জানিয়েছেন, ২০০৮ সালে কয়েকটি দল মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল। সেই ঐক্যে গণফোরাম থেকে নির্বাচনে অংশ নেই। তবে শেষে হাইকমান্ডের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করি। আর ২০১৪ সালে গণফোরাম থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাছ প্রতীকে নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকতে পেরেছিলাম।
লিটন বলেন, আমি নিজে কৃষক। এলাকায় ছোট দলের রাজনীতি করি। এবার সুযোগ পেয়েছি তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচনের। তাদের হয়েই মনোনয়ন জমা দিয়েছি।
ঝালকাঠি-১ আসন থেকে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী জসিম উদ্দিন তালুকদার এর আগে ১৯৯৬ সালে এবং ২০০১ সালে পরপর দুটি নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে জসিম উদ্দিন তরিকত ফেডারেশনের হয়ে নির্বাচন করেন।
তিনি জানান, এলাকায় আমি সুফিবাদের প্রচার-প্রচারণা করি। পেশায় জমি-ক্রয় বিক্রয় করেই জীবন-জীবিকা চলে। এখন আমাদের দলের নিবন্ধন না থাকায় তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচন করছি।
নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নেই ১৭ জনের
কথা হয় বরগুনা-১ আসনের প্রার্থী ইউনুছ সোহাগের সঙ্গে। তিনি বলেন, জীবনে কখনও আমি নির্বাচনে অংশ নেইনি। ১৯৯০ সালে একবার ডাকসুর ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছি। ওই সময় গণতান্ত্রিক ছাত্রলীগের ব্যানারে নির্বাচন করি।
পটুয়াখালী-১ আসনের নূর আলম মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও কেন্দ্রকে জানিয়ে তা জমা দেননি। তিনি বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত আমার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। পটুয়াখালী-২ আসনের প্রার্থী কায়েস মাহমুদেরও অভিজ্ঞতা নেই নির্বাচনের। একই অবস্থা পটুয়াখালী-৩ আসনের ওবায়দুল ইসলামের। পটুয়াখালী-৪ আসনের প্রার্থী দলিল উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি দিয়ে নির্বাচনে এসেও তা প্রত্যাহার করতে হয়েছে। এছাড়া আর কোনো নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমার নেই।
ভোলা-১ আসনের প্রার্থী ইকবাল হোসেন মনোনয়ন পেলেও মনোনয়নপত্র তোলেননি। তিনি বলেন, কেন্দ্রকে জানিয়েই আমি নির্বাচন থেকে সরে এসেছি। তাছাড়া আজীবন ব্যবসা নিয়ে ছিলাম। রাজনীতি, নির্বাচন সর্ম্পকে আমার অভিজ্ঞতা ছিল না। ভোলা ২, ভোলা ৩ অ্যাডভোকেট আরিফ উদ্দিন আহমেদ, ভোলা ৪ আসনের মো. হানিফও একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। মো. হানিফ বলেন, ব্যবসা করেই চলি। সুযোগ পেয়ে নির্বাচনে এলাম। ভোলার অন্যান্য আসনে কে পেয়েছে তার নাম আমার জানা নেই। আর ওসবের খোঁজও নিতে যাইনি।
বরিশাল-২ আসনে শাহজাহান সিরাজ কখনও নির্বাচনে অংশ নেননি। বরিশাল ৪ আসনের এনামুল হক, বরিশাল ৫ আসনের ফারুক আলম তালুকদার, বরিশাল ৬ আসনের টিএম জহিরুল হক তুহিন, পিরোজপুর-১ আসনের ইয়ার হোসেন রিপান, পিরোজপুর ৩ আসনের সিদ্দিকুর রহমানও জীবনে কোনোদিন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।
রাজনীতি বিশ্লেষক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, রাজনীতির পথ পরিক্রমা দীর্ঘ, সেটা যে দেশেই হোক। তৃণমূল বিএনপি নামে যে দলটির কথা শুনছি তারা জনমানুষের কাছে বেশ অপরিচিত, নতুন। অবশ্য জাতীয় নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে নতুন রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব এদেশে নতুন নয়। এ দলটিও তাই। এদের নির্বাচনী কৌশল সম্পর্কে সাধারণ মানুষ এখনও ওয়াকিবহাল নয়। তবে, নির্বাচন আর জননীতি তৈরির কাজ মৌলিকভাবে ভিন্ন। টেকনোক্র্যাট অনেক মন্ত্রীদের দেখছি সফলভাবেই জনকল্যাণমূলক কাজ করছে ন। এখানে এক্সপার্টিস বড় কথা নির্বাচন নয়। তবে, ঐতিহাসিকভাবে নতুন রাজনৈতিক দলসমূহের জন্য প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা চ্যালেঞ্জিং।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস