মাইয়াডাও লিভার সিরোসিসে মইরা গেল, আমি এখন কারে নিয়া বাঁচব?
সন্তানের জন্য অনবরত কেদেই যাচ্ছেন মা বীথি রানী মালো
‘১১ বছর আগে আমার মাইয়াডা লিভার সিরোসিসে মইরা গেল। ছিল আমার সোনার টুকরা সৌরভ। তারে কোন দোষে কারা খুন করলো। আমি এখন কারে নিয়া বাঁচব? আমি সবার কাছে বিচার চাই। ভগবানের কাছে বিচার চাই, খুনিগো যেন আমার নিজ চোখে না দেখাইয়া দুনিয়া থিকা নেয় না।’
এভাবেই বিলাপ করছেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের মাঝিকান্দা গ্রামের সৌরভ মালোর (২০) মা বীথি রানী মালো (৪৯)। বিথী রানী মালো ও স্বপন মালো দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। ২০১২ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে মারা যায় মেয়ে শম্পা মালো। এরপর থেকে সৌরভকে ঘিরেই ছিল বাবা মায়ের স্বপ্ন।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে ভাঙ্গা বাজার সংলগ্ন কুমার নদের সেতুর নিচ থেকে সৌরভ মালোর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি ঢাকা থেকে ভাঙ্গায় এসে পৌঁছান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। মৃতের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরতর জখমের চিহ্ন ছিল।
জানা গেছে, সৌরভের বাবা স্বপন মালো পদ্মা নদীতে মাছধরার কাজ করেন। এতে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। সৌরভ শহরের রঘুনন্দনপুর এলাকায় ছোট মামা দেবু সরকারের বাড়ি থেকে পড়ালেখা করতেন। পাশাপাশি ফরিদপুর শহরের হাজী শরীয়তুল্লার বাজারে শ্যামলের মাছের আড়তে খণ্ডকালীন কাজ করে পড়াশোনার খরচ চালাতেন।
বিজ্ঞাপন
গত বুধবার সৌরভ ঢাকা গিয়েছিলেন চাচাতো বোনের জন্মদিন পালন করতে। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে ফেরেন। তবে তিনি ফিরে আসেন লাশ হয়ে।
সন্তান হারানো বাবা স্বপন মালো (৫৬) বলেন, আমার ছেলে কিংবা আমাদের পরিবারের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা নেই। আপনারা এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন আমার ছেলের নামে এলাকায় কোনো খারাপ কথা পাবেন না। তাও কে আমার ছেলেকে খুন করলো। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
মাঝিকান্দা গ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াদুদ মাস্টার বলেন, এই পরিবারটি খুবই দরিদ্র।পয়সার অভাবে ১১ বছর আগে মেয়েটার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে না পারায় মেয়েটা মারা যায়। পরিবারের বাড়িঘর সর্বত্রই অভাবের ছাপ রয়েছে। বসতঘরের ৫ শতাংশ জমি ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের।
সৌরভের বন্ধু তুষার মালো (২৫) বলেন, ও বাড়িতে থাকতে আমরা একসঙ্গেই থেকেছি। ও খুব ভালো বন্ধু ছিল আমাদের। সবসময় হিসাবনিকাশ করে সবকিছু করত। বেহুদা পয়সাও নষ্ট করত না। আমাদের জানামতে ওর কোনো শত্রুও ছিল না।
এটি একটি ‘হত্যাকাণ্ড’ মন্তব্য করে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড মনে হয়েছে। এ ব্যাপারে আজ শনিবার অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছি। আশা করি দ্রুতই এ হত্যা রহস্য আমরা উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হব।
এদিকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় সৌরভের মৃতদেহ তুলে দেওয়া হয় স্বজনদের হাতে। মৃতদেহ দেখে গগন বিদারি কান্নায় ফেটে পরেন পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা। রাতেই গ্রামের শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
জহির হোসেন/এএএ