রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে দ্বিগুণ ভাড়ায় চলছে নরসিংদীর সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ  টাকা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে এক প্রকার জিম্মি করেই নিচ্ছেন সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। জেলার বেলাবো উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালকের বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১০ টাকা হলেও নির্ধারিত সেই ভাড়ার তোয়াক্কা না করে রোগীর স্বজনদের এক প্রকার জিম্মি করে নির্ধারিত ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই অ্যাম্বুলেন্স চালকের বিরুদ্ধে। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির জরুরি বিভাগের নোটিশ সাঁটানো রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে ঢাকায় অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ১৮০০ টাকা, নরসিংদী সদর, ভৈরব ও কিশোরগঞ্জের ভাগলপুরের ভাড়া ৬০০ টাকা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ন্ত্রিত দুটি এবং উপজেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। উক্ত তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি অনেক দিন ধরেই অচল। অন্য দুটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে চলে এখানকার রোগীদের সেবা কার্যক্রম। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২০০ জন রোগী বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা নেন। তবে অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন হয় গড়ে ৪-৫ জনের। এ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে নরসিংদী, ঢাকা কিংবা কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর গেলে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হয় রোগীর স্বজনদের।

উপজেলার আমলাব ইউনিয়ন থেকে আসা ভুক্তভোগী বিপ্লব মিয়া বলেন, আমি অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজনে কিছুদিন আগে ফোন দিলে ড্রাইভার বলেন, আমি নরসিংদী আছি। তারপর স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথায় আবার ফোন দিলে দেখি সে কোয়াটার থেকে নেমে আসছে। জিজ্ঞেস করলে সে কৌশল এরিয়ে যায়। এরপর ঢাকা যাওয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া জিজ্ঞেস করলে বলে, একদাম ৩৫শ টাকা হলে যাবে না হয় অন্য ব্যবস্থা করেন।

নারায়ণপুর ইউনিয়নের দড়িকান্দি গ্রামের আশিকুর রহমান একজন বলেন, আমার ভাবিকে বেলাব হাসপাতাল থেকে ঢাকা মহাখালী কলেরা হাসপাতাল নিতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ৩৫শ টাকা দিতে হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বেলাবো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মো.শাজাহানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগটি স্বীকার করে বলেন, আমাদের সরকারি বাজেট না থাকায় আমরা ঢাকা যাই না। গেছে মাসে হয়তো ৪দিন আমরা ঢাকায় গেছি। এখন হয়তো গাড়িই বন্ধ কইরা দিমু। আমরা গাড়ি চালামুই না। আপনারা যখন এগুলা নিয়া এমন উল্টাপাল্টা বলতাছেন আমরা গাড়িই আর চালাইতাম না। গাড়ি বন্ধ কইরা থুইয়া দিমু। ২-১টা ভাড়া আমরা নিছি তাও তারা (রোগীর স্বজন) তৈল খরচ দেওয়ার কথা বইলা আমাদের জোর কইরা নিয়া গেছে।

আপনি গাড়ি না চালালে রোগী কি করে অন্য হাসপাতালে যাবে? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, রোগী যেভাবে খুশি সেভাবে যাইবো। আমাদের উপর থেইকা ডিজি অফিস থেইকা বইলাই দিছে বকেয়াও কোনো বাজেট তারা দিবো না। এখন গাড়িডা চালাইলে যখন বকেয়া পরবো তখন ভর্তুকিডা দিবো কেডা? তাই তারা বইলা দিছে বাজেট না দিলে আমনেরা গাড়ি চালাইয়েন না। তবে নির্ধারিত কোন অফিসের, কোন কর্মকর্তা এ কথা বলেছেন তিনি তা বলতে রাজি হননি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৈয়দা তানজিনা আফরিন (ইভা) বলেন, আমাদের ঢাকার রেট হচ্ছে ১৮শ টাকা, তবে আমরা ৫ মাস যাবৎ কোনো তেল পাচ্ছি না। বর্তমান তেলের দাম অনুযায়ী ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ৩১৬০ টাকার তেলের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে রোগীর স্বজনকে দিয়ে তেল কিনিয়ে যেন ব্যবহার করে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এটা শুধু বেলাবোই না জেলার শিবপুর, পলাশ, রায়পুরা সহ বাংলাদেশের সব উপজেলায়ই একই অবস্থা বলে জানান তিনি।

নরসিংদী জেলা সিভিল সার্জন ডা. নূরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। রোগী নিয়ে গেলে রোগীর স্বজনরা খুশি হয়ে টিপস দিলে সেটা অন্য বিষয়। তবে রোগীদের জিম্মি করে যদি অতিরিক্ত ভাড়া নেয় সেটা অন্যায়। বিষয়টি আমি দেখব।

তন্ময় সাহা/আরকে