জন্মান্ধ তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন মুন্নি বেগমের
মুন্নি বেগম ও মজল হক দম্পতির ঘর জুড়ে এসেছিল চার সন্তান। তবে তাদের মধ্যে তিন জনেরই জন্মান্ধতার দরুন পরিবারে নেমে আসে নীরব কষ্ট। বর্তমানে অসুস্থ স্বামী ও তিন অন্ধ সন্তান নিয়ে নিরন্তর সংগ্রাম মুন্নি বেগমের। এখন তাদের সম্বল বলতে প্রতিবন্ধী ভাতা আর সামান্য কিছু আয়। মুন্নি বেগমের চেহারায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট হলেও টানতে হচ্ছে সংসারের ঘানি। মুন্নি বেগমের বাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আমজাহাট ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ফেনাপুস্করনী গ্রামে।
জানা গেছে, জন্মান্ধ তিন সন্তান মো. শাহিন, মো. সোহেল ও মো. ইউসুফের চিকিৎসায় প্রায় সব সম্বল হারিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারটি আজ অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের তিনজনের মধ্যে শাহিন ও ইউসুফ স্থানীয় তালবাড়িয়া আজিজুল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় হিফজ বিভাগে লেখাপড়া করছে। আর সোহেল বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়িতেই থাকে। সরকারি ভাতা ও সামান্য আয়ে কোনোভাবে খেয়ে পরে দিনযাপন করছে পরিবারটি। তাদের আরেক সন্তান প্রবাসে থাকেন। এখন একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছেন পরিবারটি।
বিজ্ঞাপন
জন্মান্ধ তিন সন্তানের জননী মুন্নি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি পৃথিবীতে এতই অভাগা যে আমার তিন সন্তানই অন্ধ। সবাই তাদের দূরে ঠেলে দিলেও আমি মা তাদের দূরে ঠেলে দিতে পারিনি। এখন আমার স্বামীও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সংসারের হাল ধরতে আমিই ছোটোখাটো কিছু কাজ করছি। আর সরকারি ভাতার টাকায় সন্তানদের পড়ালেখা, ভরণপোষণের খরচ দিচ্ছি। সন্তানদের নিয়ে বসবাসের মতো ঘরটি পর্যন্ত ঠিক নেই। চিকিৎসকরা তাদের এ অসুস্থতা ভালো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এখন অন্তত সুন্দরভাবে কোনোমতে জীবনধারণের জন্য সকলের সহযোগিতা চাই।
মনসুর আলম নামে তাদের এক স্বজন বলেন, তিন অন্ধ সন্তান নিয়ে এ পরিবারটি খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে। একদিকে মামা শ্বাসকষ্টের রোগী অন্যদিকে পরিবারের তিনজন সন্তান জন্মান্ধ। সবাই যদি তাদের পাশে দাঁড়ায় পরিবারটি অনেক উপকৃত হবে।
বিজ্ঞাপন
অন্ধ দুইজনের অধ্যয়নরত মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নুরুল ইসলাম বলেন, অন্ধ দুইভাই আমাদের মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে শাহিন ১৫ পারা কুরআন মুখস্থ করেছে। তার ছোটভাই ইউসুফও ৮ পারা মুখস্থ করেছে। ছাত্র হিসেবে তারা দুজনেই ভালো।
স্থানীয় শিক্ষক নূর নবী শামীম বলেন, এই ছেলেগুলো খুবই ভালো। গ্রামের অনেকে তাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে। কেউ যদি তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য কোনো উদ্যোগ নেন তাহলে পরিবারটি অনেক উপকৃত হবে।
স্থানীয় আমজাদহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মীর হোসেন মীরু বলেন, এই পরিবারের বিষয়ে আমার অবগত আছি। তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার পাশাপাশি পরিষদে যেকোনো বরাদ্দ আসলে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। বর্তমানে পরিবারটি খুবই অসহায়।
পরিবারটি পাশে দাঁড়াতে চাইলে সহায়তা পাঠাতে পারেন
বিকাশ নম্বর: ০১৮৬০-৬২৫১৪৬ কিংবা ০১৮৮৭-৯৫৪৮২৭ নম্বরে যোগাযোগ করেও পাঠাতে পারেন সহায়তা।
তারেক চৌধুরী/এএএ