এবার প্রার্থীদের প্রতি ক্ষোভ থেকে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে চাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের প্রার্থী ও আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। 

এর আগে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়ে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হিরো আলম।

হিরো আলম বাংলাদেশ কংগ্রেসের হয়ে ডাব প্রতীক নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে মোট পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন।

হিরো আলম বলেন, ভোটাররা আমাকে বলছেন- গতবার তোমাকে ভোট দিলাম, কিন্তু পাস করতে পারলা না। ভোটারদের মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেছে। আমাদের যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন এবার তাদের প্রতি ভোটারদের ক্ষোভ জন্মেছে। আমাদের আসনের এক প্রার্থীর ওপর রাগ থেকে আক্রমণ করেছেন ভোটাররা। তারা ভোটকেন্দ্রে আসতে চাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে পারবেন কিনা, আসলে ভোট দিতে পারবেন কিনা, এজেন্টদের থাকতে দেবে কিনা। ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে চাইলে কতটা তাদের আসার মতো সুযোগ করে দেবে। আমরা পুলিশের কাছে কতটা সহযোগিতা পাব, এসব বিষয় জানার জন্য আজকে এখানে এসেছি।

পুলিশের সঙ্গে কথা বলে সন্তুষ্ট কিনা- জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, এটা তো ঠিক পুলিশ জনগণের বন্ধু। পুলিশ সুপারের সঙ্গে আজকে প্রথম দেখা। তাকে দেখে মনে হয়েছে সত্যিই তিনি দেশের ভালো চান। সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, প্রার্থীরা যেমন ভোটের আগে অনেক আশ্বাস দেন। কিন্তু ভোটের পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তেমনি নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের পাশে থাকার অনেক আশ্বাস দেয় পুলিশ। কিন্তু ভোটের দিন যদি খুঁজে না পাই তখন অনেক কষ্ট লাগে। তো আমরা যে ভোটের দিন খুঁজে পাই এ জন্য স্যারের (পুলিশ সুপার) কাছে এসেছি। 

মনোনয়ন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আবার নির্বাচনে থাকলেন কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, অনেকে বলেছেন টাকা খেয়ে হিরো আলম নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছে। কিন্তু হিরো আলম কারও কাছে টাকা খেয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছে না। নির্বাচনে অনেকে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কেউ যেন ফাঁকা মাঠে গোল দিতে না পারেন এ জন্যই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। 

ঢাকায় ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বগুড়ায় পুলিশ সুপারের কাছে আসার কারণ জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ঢাকার সাবজেক্ট ঢাকায়। বগুড়ার মধ্যে বগুড়ার স্যার আমাদের। সেকারণে তার দোয়া-আশীবার্দ দরকার আছে। এখানে কিছু হলে হারুন স্যার বাঁচাবেন না। এখানে বাঁচালে স্যার আছেন।

বগুড়ার পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, নির্বাচন কমিশন আমাদের সরাসরি নির্দেশ দিয়েছে- বগুড়ায় ৫৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা যে দলের হোক বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হোক না কেন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যেন ঠিক থাকে। প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আজকে আমাদের এখানে এসেছেন। তিনি চান নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে যে ধরনের গণসংযোগ করা যায় সেসব কাজ তিনি নির্বিঘ্নে করতে চান। আর এ কাজে পুলিশের সহযোগিতা চান। আমরা যেটা বলতে চাই সকল প্রার্থী তাদের আচরণবিধির মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণাকে সমর্থন করি। ভোটারদের সম্পৃক্ত করার মধ্যে দিয়ে চমৎকার একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

চলতি বছর বগুড়া-৪ ও ৬ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন হিরো আলম। তবে দুটি আসনেই পরাজয় হয় তার। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে অংশ নিয়েও পরাজিত হন তিনি। হারান জামানত।

এর আগেও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন হিরো আলম। যদিও পরে ‘অনিয়মের’ অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

বগুড়া সদরের এরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিরো আলম শৈশবে চানাচুর বিক্রি করতেন। পরে তিনি সিডি বিক্রি এবং ডিশ সংযোগের ব্যবসা করেন। নিজেই মিউজিক ভিডিও তৈরি করে ডিশ লাইনে সম্প্রচার শুরু করেন। ইউটিউবে প্রায় ৫০০ মিউজিক ভিডিও ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন হিরো আলম।

আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/আরএআর