‘আমার মায় বুড়া। হেই হইতে গোনে খাই আমরা। প্রত্যেক বুধবার মাছ দেয়, মাংস দেয়, আবার খিচুড়ি দেয়। যেকালে যা যেরহম পারে হেরহমই খাওয়ায় আমাগো।’ কথাগুলো বলেছিলেন বরগুনার আমতলীতে ভিক্ষা করে বেড়ানো ৬০ বছর বয়সী জরিনা। 

প্রতি সপ্তাহের বুধবার ঘড়ির কাঁটায় ৩টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ভিড় জমতে শুরু করে জয়নালের খাবার হোটেলে। সপ্তাহের এই দিনে হোটেলে জরিনার মতো ভিড় জমান আরও ৪০ থেকে ৫০ জন অসহায় নারী-পুরুষ। সপ্তাহজুড়ে শহরের বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে বেড়ানো এসব মানুষদের অপেক্ষা শুধু একবেলা ভালো খাবার। বিনামূল্যে ভালো খাবারের আশায় তারা প্রতি বুধবার ছুটে আসেন জয়নালের হোটেলে। 

বরগুনার আমতলী উপজেলার পৌর-শহরের ভাই ভাই হোটেলটি এভাবেই বিনামূল্যে অসহায় মানুষদের একবেলা আহারের ব্যবস্থা করে থাকে। এটি  জয়নালের হোটেল নামেই সবার কাছে বেশি পরিচিত। হোটেলটির প্রতিষ্ঠাতা জয়নাল আবেদিনের বাবা ও মা মারা যান ১৯৯৯ সালে। এরপর থেকে সপ্তাহে একদিন তিনি অসহায়দের বিনামূল্যে খাওয়ানো শুরু করেন। এভাবে প্রায় ২৪ বছর ধরে এই হোটেলে সপ্তাহের প্রতি বুধবার গরিব-অসহায়দের একবেলা খাওয়ানো হয় এই ভাই ভাই হোটেলে। ২০১৬ সালে জয়নালের মৃত্যুর পর থেকে তার ছেলেরা এই দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন। এখানে খেতে আসা গরিব ও অসহায় মানুষের অধিকাংশই ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত।


বর্তমানে জয়নালের ৬ ছেলের মধ্যে ৪ ছেলে মিলে পরিচালনা করেন হোটেলটি। প্রতি বুধবার এ হোটেলে নিয়মিত রান্নার পাশাপাশি ৪০ থেকে ৫০ জনের জন্য আলাদাভাবে খাবার রান্না করা হয়। পরে বিকেল ৩টার দিকে উপস্থিত ভিক্ষুকদের মধ্যে ওই খাবার বিতরণ করেন তারা। 

আমতলীর হলুদিয়া এলাকা থেকে খাবার নিতে আসা পারভীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষের কাছে শুনে এক মাস ধরে প্রতি বুধবার আমি এ হোটেলে খাবার নিতে আসি। স্বামী না থাকায় দুটি বাচ্চা নিয়ে খেয়ে পড়ে থাকতে কষ্ট হয়। এখান থেকে মাছ-মাংস যা দেওয়া হয় তা আমার বাচ্চাদেরকে খাওয়াই। 

ফাতেমা নামের আরেক অসহায় নারী বলেন, আমার স্বামী, সন্তান, জায়গা-জমি কিছুই নেই। ভিক্ষা করে খাই। বাড়িতে ভালো খাবার খেতে পারি না, তাই এখানে আসি। মাছ-মাংসসহ এ হোটেল থেকে আমাদেরকে অনেক ভালো খাবার দেওয়া হয়।

ভাই ভাই হোটেল পরিচালনাকারী জয়নালের এক ছেলে আমান উল্লাহ বলেন, আমার দাদা মারা যাওয়ার পর আমার বাবা প্রথম খাবার বিতরণ করা শুরু করেন। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে আমরা খাবার বিতরণ করা শুরু করেছি। আমাদের হোটেল যতদিন থাকবে আমরা এ কাজ চালিয়ে যাব। এ ছাড়া এ কাজে প্রতিবেশীরা আমাদের ভালো চোখে দেখেন এবং তারা আমাদেরকে উৎসাহ দেন।

এ বিষয়ে আমতলী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল বাশার রুমী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জয়নালের হোটেলটি আমার ওয়ার্ডে হওয়ায় অসহায় মানুষদের ফ্রি খাওয়ানোর বিষয়টি আমি জানি। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো কাজ। নিজেদের টাকা খরচ করে প্রতি বুধবার অসহায় ও গরিব মানুষদের বিনামূল্যের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন তারা। যদি কেউ নিজের ইচ্ছায় সপ্তাহের যেকোনো বুধবার আর্থিক সহযোগিতাসহ মাছ-মাংস বা অন্য কিছু দিয়ে তাদের এ কাজে সহযোগিতা করতে চান তাহলে তাও করতে পারেন। তাদের এ কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখতে আমাদের সুযোগ হলে আমরা অবশ্যই তাদেরকে সহযোগিতা করব। 

আরকে