নির্বাচনী প্রচারণার সময় চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের ঈগল মার্কা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগারওয়ালাকে অপহরণ ও গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা প্রদান ও হামলার অভিযোগ উঠেছে নৌকা প্রতীকের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় আজ রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার প্রতিনিধি আব্দুল মালেক বাদী হয়ে নৌকা প্রতীকের সমর্থক এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহম্মেদ হাসানুজ্জামান মানিককে (৪০) প্রধান আসামি করে মোট ২২ জনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া মামলায় ১০০/১২০ অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি আলী আহম্মেদ হাসানুজ্জামানসহ এজাহারভুক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বাকি গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সদর উপজেলার যুগিরহুদা গ্রামের সোলায়মানের ছেলে হাফিজুর (৩৫), নতুন ভান্ডারদাহ গ্রামের মৃত খয়ের উদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক (৪৫), ফুলবাড়ি গ্রামের আসাদুলের ছেলে জেহের আলী (২২) ও নতুন ভান্ডারদাহ গ্রামের আলতাব হোসেনের ছেলে সুমন হোসেন (২১)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দিলীপ কুমার আগারওয়ালা তার নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকা শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ভোট প্রার্থনা ও প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন। এ সময় সদর থানাধীন নতুন ভান্ডারদহ তিন রাস্তার মোড়ে পৌঁছানো মাত্র আসামিরা পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী গালিগালাজসহ নির্বাচনী কাজে বাধা প্রদান করেন। এ সময় মামলার ৯নং আসামি নিলুয়ার তার হাতে থাকা রামদা দিয়ে দিলীপ কুমার আগারওয়ালাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কোপ দিলে তিনি কোনোরকম প্রাণে রক্ষা পান। পরে আসামিরা তাকে অপহরণের চেষ্টা করে এবং প্রধান আসামি আলী আহম্মেদ হাসানুজ্জামান দিলীপ কুমারকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা লক্ষ্য করে গুলি করার হুমকি দেয়। এ সময় প্রার্থীকে অপহরণ করার চেষ্টা করা হলে নেতাকর্মীদের প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়। এ সময় ধস্তাধস্তিতে চুয়াডাঙ্গা যুব মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আফরোজা পারভীন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলিজা এবং নির্বাচন কর্মী নাজনীন আক্তার (৪৫), রাকিব, সালমান ও  আফিলসহ কয়েকজন আহত হন।

অপরদিকে মুস্তাকিন নামে এক নৌকা প্রতীকের সমর্থক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এদিকে, ঘটনার পরই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন চুয়াডাঙ্গা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা, পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ-জোহরা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাজ্জাদ হোসেন, সদর থানা পুলিশের ওসিসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের একাধিক টিম। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতেও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

আহত মুস্তাকিন বলেন, আমি নৌকা প্রতীকের একজন কর্মী। ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর বডিগার্ডরা এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ করে। এ সময় আমিসহ কয়েকজন কর্মী আহত হই। আমি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি।

ঈগল প্রতীকের প্রার্থী দিলীপ কুমার আগারওয়ালা অভিযোগ করে বলেন, আধা ঘণ্টা ধরে গাড়ি আটকে আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অশালীন স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। আমি গাড়ি থেকে নামলে তারা মারমুখী আচরণ করে। আমার মাথায় পিস্তল ধরে অপহরণের চেষ্টা চালায়। পরে পুলিশকে খবর দিলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

তিনি আরও বলেন, আমার ধারণা ছিল একজন প্রার্থী হিসেবে কিছুটা সম্মান পাব। কিন্তু যে ধরনের আচরণ করা হয়েছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শুধু একবার নয়, দফায় দফায় আমার এবং আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে। এর নেতৃত্বে ছিলেন কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হাসানুজ্জামান মানিক।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যানসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০০/১২০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। প্রধান আসামিসহ এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

আফজালুল হক/এমজেইউ