রংপুরে প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত নেতাকর্মীরা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারণার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রংপুর আসবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগমন ঘিরে উজ্জ্বীবিত নেতাকর্মীরা। সঙ্গে বিরাজ করছে সাজসাজ রব। এ সফরে তিনি পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিকেল ৩টায় নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেবেন।
এছাড়াও পীরগঞ্জ যাওয়ার পথে তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে বেলা ১১টায় দলীয় প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের জনসভায় নৌকায় ভোট চাইবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জের লালদীঘি ফতেহপুরে আসবেন। শ্বশুরবাড়ি ফতেহপুর জয় সদনে পৌঁছে তার স্বামী আন্তর্জাতিক পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করবেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে জয় সদনে দুপুরের খাবার খাবেন।
বিজ্ঞাপন
শ্বশুরবাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর আগমনে দুপুরের খাবারে ২০ পদের রান্না হওয়ার কথা জানিয়ে তার নাতনি সাবাবা হোসেন ওহী বলেন, রুটির সঙ্গে ছোট মুরগির মাংস, বিভিন্ন ভর্তা, ছোট মাছ, বিভিন্ন শাক, ভাজি এগুলো তিনি বেশি পছন্দ করেন। আমরা ট্রাই করি সব সময় উনি যেগুলো পছন্দ করেন সেগুলোই অ্যারেঞ্জ করার।
এদিকে লালদিঘীর পুত্রবধূ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বরণ এবং জনসভা সফল করতে সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করেছেন রংপুর জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ দুটি জনসভায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর ও থানা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল স্লোগানসহ অংশ নেবেন। দীর্ঘদিন পর পীরগঞ্জের উন্নয়নের কারিগর আসছেন শ্বশুড়বাড়িতে। তাই পীরগঞ্জজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে উজ্জ্বীবিত ভোটার ও প্রার্থীরা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে আছেন ভোটারসহ সাধারণ মানুষেরা। স্থানীয়রা জানান, প্রধানমন্ত্রী রংপুরে আসছেন এজন্য আমরা উচ্ছ্বসিত। প্রস্তুত জনসভাস্থল পীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠ। নেতারা বলছেন, আয়োজন সফল করতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
পীরগঞ্জ এলাকার আওয়ামী লীগ সমর্থক রুহুল আমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের প্রিয় নেত্রী, আমাদের অনুভূতি, শক্তি, সাহস এবং অনুপ্রেরণা। পাঁচ বছর পর তিনি শ্বশুরালয়ে আসছেন। তাকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে রংপুরসহ পুরো পীরগঞ্জবাসী অপেক্ষা করছে। গোটা পীরগঞ্জে উৎসবের আমেজে ভাসছে। মঙ্গলবার নৌকার প্রার্থী শিরীন শারমিন চৌধুরীর এ জনসভা জনসমুদ্রে রূপান্তরিত হবে।
পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আমাদের পীরগঞ্জ তথা রংপুরের পুত্রবধূ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভাগমন সফল করতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এই জনসভা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর। আমরা পীরগঞ্জ উপজেলা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এই জনসভায় আসতে প্রস্তুত রয়েছি। আশা করছি ব্যাপক জনসমাগম হবে।
জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানিয়ে রংপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পীরগঞ্জে আসবেন, এই বিষয়টাকে কেন্দ্র করে পীরগঞ্জবাসী খুবই উল্লাসিত এবং ব্যাপক আগ্রহ, উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে তারা অপেক্ষা করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর দুটি জনসভার প্রস্তুতি বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মাজেদ আলী বাবুল জানান, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ সব সময় প্রস্তুত। আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর দুটি নির্বাচনী সভায় বিপুল জনসমাগম হবে। বেলা ১১টায় তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে এবং বিকেল ৩টায় পীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় বক্তব্য দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
ব্যাপক লোক সমাগম ঘটবে এবং নিকটবর্তী নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুরের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে প্রায় ৫-৭ লক্ষাধিক মানুষের ঢল নামবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সুজিত রায় নন্দী।
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রধানমন্ত্রী এই দুটি আসনের নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি শ্বশুরবাড়িতে যান। প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ চলতি বছরের ২ আগস্ট রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় বক্তব্য দেন। তবে তিনি শ্বশুরবাড়িতে যাননি।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে রংপুর-১ এবং রংপুর-৩ আসন থেকে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমানে রংপুর-২ আসনে আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, রংপুর-৪ আসনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, রংপুর-৫ আসনে রাশেক রহমান ও রংপুর-৬ আসনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে শতরঞ্জি আর হাড়িভাঙ্গা আমের খ্যাতি, ভাওয়াইয়ার সুরময় তিস্তাপাড়ের ঐতিহ্যের জেলা রংপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভাগমনে কিছু উন্নয়নের দাবি যেমন জোরালো হচ্ছে, তেমনি বিগত ১৫ বছরের উন্নয়নের মোড়কে বদলে যাওয়া ‘উন্নত রংপুর’ নিয়েও গর্বিত সবাই। একটা সময় উন্নয়নবঞ্চিত ছিল বরেন্দ্র অঞ্চলের এ জনপদ। তবে বর্তমান সরকার রংপুরকে বিভাগ ঘোষণার পর পাল্টে গেছে পুরোচিত্র।
সুষম উন্নয়নে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গেল ১৫ বছরে এখানে হয়েছে সিটি কর্পোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিন একাডেমি, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, হাইটেক পার্ক, প্রমিলা স্টেডিয়াম, শিশু হাসপাতালসহ নানা স্থাপনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন। তবে এবার এ জেলার মানুষের দাবি- তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনসহ শিল্পায়নের মাধ্যমে রংপুরকে আরও এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবেন পুত্রবধূ শেখ হাসিনা।
রংপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, রংপুর জেলার ছয়টি আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রংপুর-১ আসনে নয়জন, রংপুর-২ আসনে তিনজন, রংপুর-৩ আসনে ছয়জন, রংপুর-৪ আসনে তিনজন, রংপুর-৫ আসনে আটজন এবং রংপুর-৬ আসনে সাতজন প্রার্থী। তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর