পরিবারের দাবি সুজন পাল মানসিক ভারসাম্যহীন
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢোকার চেষ্টার সময় আটক হওয়া যুবক সুজন পাল (৩৫) বিএনপির সমর্থক। তবে তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন বলে দাবি করেছে তার পরিবার।
জানা গেছে, গত সাড়ে তিন মাস ধরে সুজন পাল ঢাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করছেন। বিএনপির সমর্থক হওয়ার সুবাদে খালেদা জিয়ার ভক্ত তিনি। এ কারণেই ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এভারকেয়ার হাসপাতালে গত শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) খালেদা জিয়াকে দেখার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়নের ইনতাজ মোল্লার ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা সুখী বেগম ও সোহরাব পাল দম্পতির সন্তান সুজন পাল। সুজনের একমাত্র ছোট ভাই সুমন পাল (২৬) পর্তুগাল প্রবাসী।
সুজনের বড় মামা আইয়ূব ব্যাপারী ফরিদপুর শহরের কমলাপুর মহল্লায় ব্যবসা করেন। এই মামার সংসারেই বড় হয়েছেন সুজন।
বিজ্ঞাপন
এ ব্যাপারে সুজনের মামা আইয়ূব ব্যাপারী ঢাকা পোস্টকে জানান, সুমন গত ৭-৮ বছর ধরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। কখনো ভালো থাকেন, আবার নিয়মিত ওষুধ না খেলে পাগলের মতো আচরণ করেন। স্থানীয় ভাষানচর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন সুজন। সুজনের বাবা সোহরাব পাল কৃষিকাজ করতেন। ২৩ বছর আগে তার মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুর পর সুজনের মা সুখী বেগম অন্যত্র বিয়ে করেন। এ ঘটনায় মানসিকভাবেভাবে ভেঙে পড়েন সুজন।
এদিকে অভাব-অনটনের কারণে ছোটবেলা থেকেই বড় মামার বাড়িতে থাকতেন সুজন। সেখানে নানির কাছে বড় হন তিনি। নানির অনুরোধে ২০১৮ সালে পাশের চরভদ্রাসন উপজেলার জাকেরের সুরা গ্রামের সুইটি বেগমকে বিয়ে করেন সুজন। সেই ঘরে বর্তমানে ৩ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে তার। তবে মানসিক অসুস্থতার কারণে গত দুই বছর আগে সেই বউকে তালাক দেন সুজন। বর্তমানে তার ৩ বছর বয়সী মেয়ে তার মায়ের সঙ্গে মামাবাড়িতে রয়েছে।
সুজনের বড় মামা আইয়ুব ব্যাপারী আরও জানান, তাদের বাড়িতে ছোটবেলা থেকে নানির কাছে বড় হন সুজন। গত সাড়ে চার বছর আগে সেই নানি মারা যাওয়ায় পাগলপ্রায় হয়ে সুজন পরিবারের সদস্যসহ সবার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেন। তবে তার এই পাগলামি সব সময় থাকে না। মাঝে মাঝে এই অবস্থা হয়।
ঢাকা পোস্টকে সুজনের মামা বলেন, আমি বারবার চেয়েছি সুজন ও তার ছোট ভাই সুমনকে প্রতিষ্ঠিত করতে। এজন্য সুজনকে কুয়েত ও কাতার পাঠাই। তবে তার পাগলামির কারণে সেখানে সে টিকতে না পারায় দেশে চলে আসে। সাড়ে তিন মাস আগে ঢাকার মগবাজারের একটি এয়ারকন্ডিশনার মেরামতের ওয়ার্কশপে তাকে কাজ শেখানোর জন্য পাঠাই।
তিনি আরও বলেন, সুজন ছোটবেলা থেকেই বিএনপির একজন সমর্থক। এলাকায় বিএনপির মিছিল-মিটিংয়ে না গেলেও সে বিএনপিকে ভালোবাসতো। যার কারণে খালেদা জিয়াকে সে ভালোবাসে। ঢাকায় থাকার কারণে যখন সে জেনেছে খালেদা জিয়া ওই হাসপাতালে (এভারকেয়ার হাসপাতাল) আছেন তাই কৌতূহলবশত সেখানে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। এর বাইরে কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।
ভাষানচর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মো.ফারুক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুজনের বাবা সোহরাব পালও ছিলেন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। বিভিন্ন কারণে রাগারাগি হলে তিনি রশি নিয়ে দৌড়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করতেন। আমাদের মনে হয় বাবার সেই একটা ছাপ সুজনের মধ্যে আছে।
এর আগে গত শনিবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢোকার চেষ্টার সময় আটক করা হয় সুজন পালকে। গতকাল রোববার পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই যুবকের বিরুদ্ধে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।
উল্লেখ্য, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গত ৯ আগস্ট থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে তাকে এখনো চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হচ্ছে।
জহির হোসেন/এমজেইউ