আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড়-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে নৌকা-ট্রাকসহ সাত প্রতীকের প্রার্থীরা। তবে এ আসনে নৌকা-ট্রাকের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানা গেছে। এ আসনে অপর প্রতিদ্বন্দ্বিরাও নেমেছেন ভোট প্রচারণায়। তারাও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন ও করছেন গণসংযোগ, নির্বাচনী সভা। 

তবে জাতীয় পার্টির দুজন প্রার্থী থাকায় প্রতীক বরাদ্দ স্থগিত থাকার কারণে লাঙ্গল প্রতীকের কোনো প্রার্থী ভোট প্রচারণায় নামতে পারছেন না বলে জানা গেছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ আসনটিতে জমে উঠেছে নৌকা-ট্রাকের মাঠের প্রচারণার লড়াই। নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট লড়াই করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তা। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের সাবেক জনপ্রেক্ষিত কর্মকর্তা। পঞ্চগড়-১ আসনটি তিনি একটি স্মার্ট জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চান। সে লক্ষ্য নিয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচন থেকেই এলাকায় বিভিন্ন জনমানুষের সঙ্গে মিশেছেন ও অনেককে সহযোগিতা করেছেন। 

অপরদিকে এবার নির্বাচনে বৃহত্তর বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগ থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ট্রাক প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদ প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

দিন যত গড়াচ্ছে, ঘনিয়ে আসছে নির্বাচন। নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ, উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে সর্বত্রভাবে ভোটের মাঠ গরম করছেন এ দুই তরুণ প্রার্থী। ভোট লড়াইয়ে ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে জোরেশোরেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তারা। সম্ভাবনা উন্নয়ন করার পরিকল্পনা নিয়ে গণসংযোগ, নির্বাচনী সভা ও ভোটারদের কাছে গিয়ে তুলে ধরছেন প্রার্থী ও সমর্থক নেতাকর্মীরা। আসনটিতে এ তরুণ দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ভোটারদের মধ্যে এ দুই তরুণ প্রার্থীকে নিয়ে চলছে নানান আলোচনা। তারা কাকে দেবেন ভোট এ নিয়ে চলছে কানাঘুষা। চায়ের টেবিল থেকে সর্বত্রই চলছে আলোচনা। বিপুল ভোটে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী দুই প্রার্থীই। অনেকেই বলছেন, আমরা নৌকাতেই ভোট দেব। আবার অনেকেই বলছেন দুইবারের সফল সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের রাজনীতির নীতিগত কারণে ট্রাক প্রতীককেই ভোট দেব। শেষ পর্যন্ত ভোটারদের ভোটে কে পরবেন জয়ের মালা তা দেখার অপেক্ষা শুরু হয়েছে এখন থেকেই।

জানা যায়, পঞ্চগড়-১ আসনটি জেলা সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী এ তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৮৪ সালে গঠিত হয় পঞ্চগড়-১ নির্বাচনী এলাকা। ১৯৮৬ সালে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সিরাজুল ইসলাম। তিনি পঞ্চগড়-২ আসনের বর্তমান রেলমন্ত্রীর নুরুল ইসলাম সুজনের বড় ভাই। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত আব্দুল কদ্দুস। এরপর ১৯৯১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত এ আসনটি ছিল বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মির্জা গোলাম হাফিজ ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিনের দখলে। ১৯৯১ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন মির্জা গোলাম হাফিজ ও ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।  

এরপর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এ আসনে সংসদ নির্বাচিত হন মজাহারুল হক প্রধান। ২০১৪ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে নাজমুল হক প্রধান ও ২০১৮ সালে আবার আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন মজাহারুল হক প্রধান। এবারও তিনি মনোনয়নপত্র নিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এ আসনে এবার নতুন মুখ হিসেবে মুক্তা-সম্রাট লড়াই করছেন। একজন দলীয় মনোনীত, অপরজন স্বতন্ত্রভাবে।

২০০৮ সাল থেকে আসনটিতে আওয়ামী লীগের দু’বার ও জাসদের মাধ্যমে একবার এ নিয়ে মোট চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২০০৮ ও ২০১৮ সালে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব করেন পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-ভাপতি মজাহারুল হক প্রধান। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে এবার দলীয়ভাবে মনোনয়ন না পাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। অপরদিকে ২০১৪ সালে জাসদ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব করেন বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নাজমুল হক প্রধান। তিনি এবারও নির্বাচনে অংশ নেননি।

এ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৩৭ হাজার ২২ জন। তার মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৯ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬২ জন। তার মধ্যে তেঁতুলিয়া উপজেলায় ১ লাখ ১৬১, পঞ্চগড় সদর ২ লাখ ২৩ হাজার ৫৪১ ও আটোয়ারীতে ১ লাখ ১০ হাজার ৩২০ জন।

নির্বাচনে নৌকা প্রতীক প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছেন তেঁতুলিয়া উপজেলায় বাংলাদেশ কৃষকলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন। তিনি বলেন, আগামী সাত তারিখের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা হয়েছেন, তারা একই সময় নৌকার প্রার্থী ছিলেন। নৌকা বাদ দিয়ে তারা যখন অন্য একটি মার্কা নিয়ে মাঠে নেমেছে সেটা পঞ্চগড়-১ আসনে কেউ মেনে নিচ্ছে না। সে কারণে আমরা আশাবাদী আমরা ৭ তারিখে নির্বাচনে নৌকা বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবে। একই কথা বলেন দলের আব্দুর রাজ্জাক ও জুলফিকার আলী জুয়েল।

এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন তেঁতুলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু। তিনি বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দল থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করার সুযোগ দিয়েছেন বলে আমরা ভোট করছি। আমার যতদূর নির্বাচনী অভিজ্ঞতা তাতে বলতে পারি, তেঁতুলিয়া উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার সাদাত সম্রাট ট্রাক মার্কায় ভালো অবস্থানে রয়েছেন। যারা আমরা মূল আওয়ামী লীগ করি, তারা ট্রাকে নির্বাচন করছি। এখানে যে নৌকার প্রার্থী তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হয়েছে তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো কর্মীর যোগাযোগ নেই। তাই আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, তারাই ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করছি। আশা করছি বিপুল ভোটে ট্রাক বিজয় লাভ করবে।

অপরদিকে পঞ্চগড়-২ আসনে রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম সুজনের বিপরীতে তেমন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বললেই চলে। এ আসন থেকে সুজনসহ ভোট লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন মোট ৫ জন। তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মনোনীত লুৎফর রহমান রিপন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নৌকার সঙ্গে শক্ত লড়াই করছেন। 

তবে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকে খাটো করে দেখছেন না আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী টানা তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি এলাকায় গণসংযোগ থেকে শুরু করে ভোটারদের কাছে গিয়ে মতবিনিময়ে এসব কথা বলছেন। আগামী উন্নয়ন সম্ভাবনা ও দায়িত্ব পালনে কী কী করবেন তা ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন তিনি।

এসকে দোয়েল/আরকে