জয়পুরহাট-২
নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৯
জয়পুরহাট-২ আসনের আক্কেলপুর উপজেলায় প্রার্থীর নৌকা ও কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ৯ জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আক্কেলপুর থানায় উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায় ৩৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৯০ থেকে ১১০ জনকে আসামি করা হয়।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আক্কেলপুর পৌরশহরের কলেজ বাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফটক এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আক্কেলপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনূর রহমান ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ফটকের সামনে সড়কের একপাশে অর্ধেক স্থান জুড়ে চেয়ার বিছিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের নৌকার পথসভা করছিলেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সড়কের অপর অর্ধেক অংশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করছিল। সন্ধ্যা ৬টার দিকে নৌকার পথসভা শেষ পর্যায়ে চলে এসেছিল। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী একটি মিছিল নিয়ে ওই স্থান পার হচ্ছিলেন। তখন স্বতন্ত্র প্রার্থীর একজন কর্মী নৌকার পথসভার দিয়ে তাকিয়ে টানা সুরে ‘কাঁচি....মার্কা’ বলেন। এর পরপরই নৌকার পথসভার পাশ থেকে একজন চেয়ার ছুঁড়ে মারেন তার দিকে।
এরপর নৌকার কয়েকজন নেতাকর্মী ও সমর্থক হাতে করে চেয়ার এনে কাঁচি মার্কার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করলে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মাহফুজ চৌধুরী কাঁচা বাজারে গিয়ে ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানায়। প্রতিবাদের পর তিনিসহ তার বোন ও আহত কয়েকজন কর্মী চিকিৎসা নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে গেলে আবারও দ্বিতীয় দফায় উভয় পক্ষের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের আহত ৯ জন ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
নৌকা প্রতীকের ওই পথসভার সভাপতি ও আক্কেলপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এনায়েতুর রহমান আকন্দ বলেন, আমাদের যার যার বক্তব্য দেওয়া শেষ হয়েছে। সভাপতি হিসেবে আমি বক্তব্য দিয়ে পথসভা শেষ করবো। সেই মুহূর্তে কাঁচি মার্কার মিছিল যাচ্ছিল। মিছিলের শেষের অংশের দুএকজন মেয়েদের চেয়ার ধরে টানাটানি করে। মেয়েরা ভয় পেয়ে হুমড়ি খেয়ে আমাদের দিকে সরে আসতেছিল। তখন আমাদের এখানে দুএকজন তাদের বসতে বলে। ওই অবস্থায় তারা গায়ে পড়ে গন্ডগোল করে। এতে আমাদের কয়েকজন আহত হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর বলেন, তারা মিছিলে হামলা করে আমার কর্মী-সমর্থকদের আহত করেছে। আমার বোন, আমি ও কয়েকজন কর্মী আহত হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাই। সে সময় তারা আবারও হামলা চালায়। আমার কর্মী-সমর্থকের ওপর বারবার হামলা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
পাল্টাপাল্টি মামলায় আসামি ৩৬ জন
দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় উভয় পক্ষের দুটি মামলা হয়েছে। স্বতন্ত্র কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী গোলাম মাহফুজ চৌধুরী ওরফে অবসর বাদি হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫০ থেকে ৬০ জনের নামে মামলা করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- কনক ওরফে কানু মহন্ত (৩৫), শারফুল ইসলাম (৩২), আতিকুর রহমান মিঠু (৫৫), নাঈম (২৬), আমিনুল ইসলাম (৪২), তপু (২৭), আনোয়ার হোসেন বাবু (৩৮), সাকিল হোসেন (৪৫), এহসানুর রহমান (৩৫), শাহাদত হোসেন (৩৮), বিপুল চন্দ্র ঘোষ (৩৭), রকি (৩২), তন্ময় (৩৩), মামুন মিয়া (৩৮), ডাবলু (৪০) ও সামছুল (৫০)।
অপরদিকে নৌকার পক্ষে আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র শহীদুল আলম চৌধুরী বাদি হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিরা হলেন- আনোয়ার ইসলাম বাবলু (৫৫), গুলসান আরা (৪৫), হাবিবর রহমান (২৬), আহসান আলম (২২), ফারুক চৌধুরী (৫৫), রেজুওয়ান চৌধুরী (৪২), মেরিন আকন্দ (৪০), মাহবুব রশিদ (৩৮), বন্দনা বাগচী (৫২), সানোয়ার হোসেন (৪৭), শহিদুল ইসলাম (৪৫), রাসেল (৩৫), আবুল কালাম খাঁ (৪৫), হারুনুর রশিদ রাজা (৪৪), একরামুল হোসেন রুবেল (৬০), মুক্তার হোসেন (৩২), জয়নাল হোসেন (৩৯), সাকিব হোসেন (২৭), বাবু মেম্বার (৩৩) ও হাকিম (৩১)।
আক্কেলপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনূর রহমান বলেন, সংঘর্ষের ঘটনার পর এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় উভয় পক্ষের দুটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায় ৩৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৯০ থেকে ১১০ জন আসামি হয়েছে।
চম্পক কুমার/এএএ