স্বামীও প্রার্থী, কিন্তু স্ত্রী ভোট চাচ্ছেন অন্য প্রার্থীর
সুফিয়া রহমান ও মাসুদুর রহমান
রাজনীতিতে মত পার্থক্য একটি চিরায়ত ব্যাপার। একই পদের জন্য স্বামী-স্ত্রীর ভিন্ন ভিন্ন প্রতীকে লড়াইয়ের সংবাদ ইতিপূর্বে পাওয়া গেলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসনে দেখা গেছে স্বামী মাসুদুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন লাঙ্গল প্রতীকে আর স্ত্রী সুফিয়া রহমান ভোট চাচ্ছেন নৌকায়। একই ঘরে বসবাস করেও স্বামী স্ত্রীর বিপরীতমুখী রাজনীতির বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক কৌতূহল, আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। মাসুদুর রহমান পদত্যাগ করার পর তার স্ত্রী সুফিয়া রহমান আওয়ামী মহিলা লীগে যোগদান করেন। এর কিছুদিন পরে সুফিয়া রহমান আওয়ামী মহিলা লীগের শরীয়তপুর সদর উপজেলার সভাপতি নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছুদিন আগে মাসুদুর রহমান জাতীয় পার্টিতে ফিরে এসে জেলা সভাপতির দায়িত্ব পান। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মাসুদুর রহমান। অন্যদিকে তার স্ত্রী সুফিয়া রহমান আওয়ামী মহিলা লীগেই থেকে যান।
বিজ্ঞাপন
মাসুদুর রহমান তার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দিন-রাত আসনটির সর্বস্তরের নাগরিকদের কাছে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করছেন। অন্যদিকে স্ত্রী সুফিয়া রহমান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপুকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের কাছে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরছেন। ইকবাল হোসেন অপুর স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিনের সঙ্গে সুফিয়া রহমান মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে উঠোন বৈঠকও করছেন।
মেহেদী হাসান ফাহিম নামে এক ভোটার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এর আগে কোনো এক নির্বাচনে একই পদের জন্য স্বামী স্ত্রীকে একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখেছি। তবে স্বামী প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রী অন্য এক প্রার্থীর প্রচারণা করে ভোট চাইছেন, এটা প্রথম দেখলাম। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন মহলে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিলেও আমি মনে করি, রাজনৈতিক এই মত পার্থক্য বাংলাদেশের নারীদের জেগে ওঠার চিত্র।
বিজ্ঞাপন
লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মাসুদুর রহমানের স্ত্রী সুফিয়া রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজনীতির মাঠে আমাদের মত পার্থক্য থাকলেও সংসার জীবনে আমরা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই, একে অপরের কথা মেনে চলি। কিন্তু রাজনৈতিক মাঠে দুইজনই আলাদা পথে হাঁটছি। কেউ কাউকে বাধা দিচ্ছি না, প্রভাবিত করার চেষ্টাও করছি না। ৫ বছর ধরে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ভোটের মাঠে প্রচারণা করছি। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছি। আমার স্বামী মাসুদুর রহমান জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি তার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন। তিনি তার মত ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন।
মহিলা আওয়ামী লীগের শরীয়তপুর জেলার সভাপতি সামিনা ইয়াছমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুফিয়া রহমান এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। দলের একজন কর্মী হিসেবে তিনি আমাদের সঙ্গে নৌকা প্রতীকের প্রচার-প্রচারণা করছেন। তার স্বামী মাসুদুর রহমান জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন বলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর বিরোধী দুই প্রতীকের নির্বাচন করায় বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল ও আলোচনা আছে।
জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মাসুদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুফিয়া ও আমি সংসার জীবনে সুখী দম্পতি। আমাদের তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দলীয় সিদ্ধান্তে আমি নিজে প্রার্থী হলেও আমার স্ত্রী ভিন্ন মতাদর্শের হওয়ায় তাকে আমার পক্ষে কাজ করতে বলিনি। সুফিয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করছে। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। রাজনীতিতে ভিন্নতা থাকলেও পারিবারিক জীবনে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।
প্রসঙ্গত, শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন অপু, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রার্থী আবুল বাশার মাদবর, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের বটগাছ প্রতীকের আব্দুস সামাদ ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা। আসনটির মোট সংখ্যা ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪৯ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯০ হাজার ৪২৮ ও নারী ১ লাখ ৭২ হাজার ৯১০ জনসহ তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ১১ জন। এসব ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন।
সাইফ রুদাদ/এএএ