সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার

নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে ১১টি অভিযোগ করেছেন ওই আসনের ছয়জন প্রার্থী। 

গতকাল শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে নীলফামারী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন তারা।

অভিযোগকারী প্রার্থীরা হলেন- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জাফর ইকবাল সিদ্দিকী (নোঙ্গর),  স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমরান কবির চৌধুরী (ট্রাক), জাতীয় পার্টির (জেপি) মখদুম আজম মাশরাফি (বাইসাইকেল), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তসলিম উদ্দিন (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের সিরাজুল ইসলাম (টেলিভিশন) ও তৃণমূল বিএনপির অ্যাডভোকেট এন কে আলম চৌধুরী (সোনালী আঁশ)।

অভিযোগপত্রে ছয় প্রার্থী ওই আসনের নির্বাচনী এলাকায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি বলে উল্লেখ করনে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে তাদের অভিযোগগুলো সুরাহা করতে আগামী ৩ জানুয়ারি মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তারা। এছাড়াও অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে এবং ভোটগ্রহণকালে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তারা করেছেন তা ঘটলে অন্যান্য প্রার্থীরা কীভাবে প্রতিকার পাবে, সে বিষয়ে আগামী ৩ জানুয়ারির মধ্যে তাদেরকে লিখিতভাবে জানানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

৬ প্রার্থীর অভিযোগগুলো হচ্ছে-

১। বর্তমান সংসদ সদস্য ও তার অনুসারী কর্তৃক নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ৩০০ ভোটারকে তৈরি করে রেখেছেন। যে সকল ভোটার সারাদিন ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ও সময় সময়ে ভোটারদের স্থান পরিবর্তন করে সামনের লোক পেছনে ও পেছনের লোক সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে তা দেখাবে। যে বিষয়ে জনশ্রুতি আছে। ভোটের দিন অবৈধভাবে ব্যালটে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করবে। 

২। বর্তমান সংসদ সদস্য ও তার অনুসারী কর্তৃক স্থানীয় ভোটার যারা বিভিন্ন নিরাপত্তা ভাতার আওতায় আছে তাদের নৌকায় ভোট না দিলে ভাতা বন্ধ করার হুমকি সম্পর্কে জনশ্রুতি রয়েছে।

৩। ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র হাতিয়ে নিয়ে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করার পরিকল্পনা এবং আশপাশে ভোটারদের কেন্দ্রে থেকে নৌকায় ভোট দেওয়ার বাধ্য করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

৪। বর্তমান সংসদ সদস্য ও তার অনুসারী কর্তৃক প্রিসাইডিং অফিসাররা অত্র এলাকার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় তাদেরকে ভয়ভীতি, হুমকি বা অবৈধ অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করার পরিকল্পনা করেছে। যেন ভোট চলাকালে প্রিসাইডিং অফিসাররা অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদেরকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয় বা পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেয়, যেন অন্য প্রার্থীর এজেন্টরা ভয়ে চুপ করে থাকে এবং যাতে করে বর্তমান সংসদ সদস্যের এজেন্টরা ব্যালট বই নিয়ে সিল মারতে পারে বা তাদের ছাপানো ব্যালট ভোট বাক্সে ঢুকাতে পারে। এ কারণে আমরা ডোমার ডিমলার প্রিসাইডিং অফিসারদের নীলফামারী জেলার অন্য আসনে ডিউটি প্রদানে এবং অন্য আসনের প্রিসাইডিং অফিসারদের ডোমার-ডিমলায় ডিউটি প্রদানে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

৫। বাহির থেকে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে বা হুবহু ব্যালট পেপার ছাপিয়ে নিয়ে এসে সংসদ সদস্যের অনুসারী কর্তৃক কৌশলে ব্যালট বাক্সে ঢুকানোর পরিকল্পনা করেছে। যেমন- একজন ভোটার কর্তৃক একের অধিক ব্যালট পেপার ৫/১০টি করে বাক্সে ঢুকানো।

৬। বর্তমান সংসদ সদস্যের ব্যালট পেপারের বান্ডিলে পরিমাণ কম রেখে ১০০টির ঘোষণা লেখা।

৭। এক প্রার্থীর ব্যালট পেপারের বান্ডিলের ওপরে ও নিচে বর্তমান সংসদ সদস্য নামে নৌকা মার্কা ব্যালট লাগিয়ে বান্ডিলের ওপরে লাগানো ব্যালট মার্কায় প্রার্থীকে জেতানো। এটি নিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্যের পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে জনশ্রুতি আছে।

৮। চূড়ান্ত ফলাফলে এক প্রার্থীর গণনার সংখ্যা অন্য প্রার্থীর নামে প্রকাশ করা এবং এ ধরনের ক্ষেত্রে অন্য অন্য এজেন্টদের বের করে দিয়ে শুধু একজন এজেন্টকে ভোট গণনার সময় ভেতরে উপস্থিত রাখা। সকল প্রার্থীর সকল এজেন্ট গণনার সময় ভোটকেন্দ্রের ভেতরে উপস্থিত থাকতে পারে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা। কেন্দ্রের ফলাফল সকল এজেন্টের উপস্থিতিতে ঘোষণা করে সেখানে এজেন্টদের সই নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা। বর্তমান সংসদ সদস্য এই বিষয়গুলো করতে দেবে না মর্মে জনশ্রুতি রয়েছে।

৯। এখন পর্যন্ত অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকা মার্কার প্রার্থী মো. আফতাব উদ্দিন সরকার বা তার অনুসারী কর্তৃক নানা রকম হামলা ও হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে থানায় একাধিক লিখিত অভিযোগ এবং থানা নির্বাহী অফিসারের নিকট টেলিফোনে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও ওই সমস্ত হামলা, হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ হচ্ছে না।

১০। বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকা মার্কার প্রার্থী মো. আফতাব উদ্দিন সরকার গত কয়েকদিন আগে ১৮ ডিসেম্বর ইসলামী ফাউন্ডেশনের সকল ইমামদেরকে তার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যা তার বর্তমান সংসদীয় পদের ক্ষমতার অপব্যবহার।

১১। বর্তমান সংসদ সদস্য ও তার অনুসারী কর্তৃক প্রচার চালানো হচ্ছে যে, একটি ভোট পেলেও বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকা মার্কার প্রার্থী মো. আফতাব উদ্দিন সরকার নির্বাচিত হচ্ছেন, যা পূর্ব নির্ধারিত।

শরিফুল ইসলাম/আরএআর