নিজের জমিতে কাজ করছেন রেজাউল

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন সলুকাবাদের কাপনা গ্রামের কৃষক মো. রেজাউল করিম (৫০)। একসময় নিজের ভিটে ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এখন নিজের বাড়িঘর, ফসলি জমিসহ সবকিছু হয়েছে। দীর্ঘ ২৩ বছর ভারতের সিমান্তঘেঁষা গ্রাম কাপনার মাটি খুঁড়ে ফলিয়েছেন সবুজ-সোনালি শস্য। আর সে শস্যের সোনালি আভায় আলোকিত হয়েছে নিজের ঘর।

নিজের ৭৫ শতক জমিতে শিম, মরিচ, লালশাক, করলা, লেবুসহ আরও অনেক রকমের সবজির চাষাবাদ করেন তিনি। সারা বছরই কোনো না কোনো জাতের সবজি চাষ করেন এই জমিতে। প্রতি মৌসুমে দুই লাখ টাকা লাভ হয়।

রেজাউলের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে সিলেট শহরে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। বাকি দুই সন্তান গ্রামের একটি মাদরাসায় পড়ছে।

রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিজের জমি ছিল না। একটি ছোট ঘরে অনেক কষ্টে বসবাস করেছি সন্তানদের নিয়ে। এখন নিজের জমি হয়েছে। বাড়ি হয়েছে। বাড়িতে সাড়ে সাত লাখ টাকা খরচ করে একটা ঘর নির্মাণ করেছি। সেখানে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শান্তিতে বাস করছি।

তিনি জানান, ৭৫ শতক জায়গায় সবজি চাষ করে ১৩ কেয়ার (৩০ শতকে ১ কেয়ার) ধান চাষের জমি বন্ধক নিয়েছেন। এই জমিতে এখন ধান চাষাবাদ করেন। এতে গত বছরে যে পরিমাণে ধান পেয়েছেন, তাতে চার সদস্যের পরিবারের সারা বছরের খাবার রেখে আরও ১০৬ মণ ধান বিক্রি করতে পেরেছেন।

তবে কৃষিকাজে সরকারি দফতরের পরামর্শ ও সহযোগিতা না পেয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা পাইনি। সারা বছরই বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করি। অনেক সময় নতুন জাতের সবজি চাষ করতে গিয়ে লোকসানে পড়তে হয়েছে। কিন্তু কৃষি অফিসের পরামর্শ পেলে এই লোকসানের শিকার হতাম না।

একই গ্রামের সবজিচাষি আবদুল মজিদ (৩০)। তার বাপ-দাদার পেশা ছিল কৃষিকাজ। তাই লোকসান হলেও এই পেশায় যুক্ত হয়ে আছেন। আবদুল মজিদ বলেন, সারাজীবন আমরা চাষাবাদ করে আসছি। বাপ-দাদাও কৃষিকাজ করেছেন, তাই আমিও করি। কিন্তু কোনো সময়ে সরকারি কোনো লোককে দেখিনি আমাদের কাছে আসতে। কৃষি অফিসের কাজ কী? কে কৃষি অফিসার, আমরা জানি না, চিনিও না।

জানা যায়, মজিদ ৩ শতক জমিতে সবজি চাষ করেন। অল্প জমি হলেও বছরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেন তিনি। এ ছাড়া ৪ কেয়ার জমিতে প্রতিবছর ধান চাষ করেন। এই দুই পদ্ধতির চাষাবাদে কোনো রকম চলে যায় তার সংসার।

তবে মজিদের দাবি, এলাকার অনেক মানুষ পরামর্শ ও সহযোগিতার অভাবে কৃষিজমি পতিত রেখে দিয়েছেন। প্রথম সবজি চাষ করেই তারা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন। তাই পরে আর চাষাবাদ করেনি। সবজি চাষে সরকারি পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে কোনো জমি অনাবাদি থাকবে না। এলাকার মানুষ সব জমি চাষাবাদ করবে বলেও জানান তিনি।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নয়ন মিয়া বলেন, আমাদের সলুকাবাদ ইউনিয়ন ও ধনপুর ইউনিয়নের শাকসবজি সবচেয়ে ভালো হয়। সেখানে শশা, ক্ষিরা, তরমুজ, ঝিঙা, লালশাক, পুঁইশাক, ঢ্যাঁড়শ থেকে শুরু করে সব রকমের সবজি চাষাবাদ হয়। পুরো উপজেলায় ২ হাজার ১২৩ হেক্টর জমিতে শুধু শাকসবজি চাষাবাদ হয়। শুধু সলুকাবাদ ইউনিয়নের প্রায় ১২ হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষাবাদ হয়। জেলার সবজির চাহিদা এখান থেকেই অনেকটা পূরণ হয়।

কৃষকদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনাকালীন কিছুটা যোগাযোগ কম হচ্ছে। তবু আমাদের দুজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। 

এনএ