গাইবান্ধা জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও দুটি আসনে লড়ছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী। এর মধ্যে গাইবান্ধা-২ সদর আসনটি জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছেড়ে দেওয়ায় বড় কোনো রাজনৈতিক দ্বিধা-বিভক্তি না থাকায় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশের সমর্থনে ভালো অবস্থানে রয়েছে মহাজোটের লাঙ্গল।

এই আসনে আ.লীগের নৌকার প্রার্থী না থাকলেও ভোট যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়ছেন আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ অবস্থায় মহাজোটের লাঙ্গল আ.লীগ নেতাকর্মীদের সমর্থন পাওয়ায় অনেকটা এগিয়ে রয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ভোট যুদ্ধে রয়েছেন ৫ জন প্রার্থী। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন টানা তিন বারের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি। কিন্তু গিনি মনোনয়ন পেলেও বিএনপি এই নির্বাচনে না থাকায় কৌশলে ক্ষমতাসীন আ.লীগ-জাপা সমঝোতায় দলের নির্দেশে তিনি তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। জাতীয় পার্টিকে এই আসনটি ছেড়ে দেওয়ার ফলে এখন এ আসনে মহাজোটের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর রশীদ সরকার। তিনি এই আসনে ১৯৯১-১৯৯৬ সালে দুই দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া আব্দুর রশীদ সরকার ২০০৯ সালে গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তবে এই আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকলেও ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়ছেন আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ার কবীর (ট্রাক)। শাহ সারোয়ার কবীর জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগ করা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। তিনিও নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

এছাড়া এ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা হলেন, শাহ সারোয়ার কবীরের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী মোছা. মাছুমা আক্তার (ঈগল পাখি), এন এনপি’র জিয়া জামান খান (আম) ও জাসদের মো. গোলাম মারুফ মনা (মশাল)।

দীর্ঘদিন থেকেই গাইবান্ধায় আ.লীগের রাজনীতিতে কিছুটা বিভক্তি রয়েছে। এই আসনে দলীয় বিভক্তির বড় একটি অংশে রয়েছেন স্থানীয় সাংসদ মাহাবুব আরা বেগম গিনি। আর অপর অংশে রয়েছেন জেলা আ.লীগের সহসভাপতি ও সাবেক মেয়র শাহ জাহাঙ্গীর কবীর মিলন। মিলনের সঙ্গে রয়েছেন সদ্য পদত্যাগ করা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ সারোয়ার কবীর। তারা দুজন আপন চাচাতো ভাই।

আওয়ামীগের দলীয় সিদ্ধান্তে মাহবুব আরা বেগম গিনি নৌকার মনোনয়ন পেয়েও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়ে কাজ করছেন মহাজোটের লাঙ্গলের প্রার্থী আব্দুর রশীদ সরকারের সঙ্গে। তবে, নির্বাচনে আ.লীগ তাদের নেতাকর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শাহ সারোয়ার কবীর। 

তবে জেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ সমর্থন দিয়েছে জাতীয় আব্দুর রশিদ সরকারকে। যার কারণে জনমত মিছিল-মিটিং থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে জাপা। এ অবস্থায় এই আসনে ভোটের লড়াইয়ে কিছুটা চাপে পড়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ্ সারোয়ার কবির।

দুই প্রার্থীই নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইছেন। বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে একে-অপরের কড়া সমালোচনাও করছেন। এ আসনের ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে পাঁচ প্রার্থী থাকলেও মহাজোটের লাঙ্গল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক প্রতীকের মধ্যে হবে মূলত ভোটের লড়াই।

লাঙ্গলের প্রার্থী আবদুর রশিদ বলেন, এক সময় আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। আমি এমপি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালী সময়ে এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। মানুষ নিশ্চয়ই তা ভুলে যায়নি। এছাড়াও এই আসনের বর্তমান সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি এমপি আমার পক্ষে কাজ করছেন। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের সিংহভাগ নেতাকর্মী মহাজোটের সঙ্গে রয়েছে। তারা জোড়ে-সোড়ে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। আমি শতভাগ আশা করছি আগামী ৭ তারিখে  জনগণ আমাকেই নির্বাচিত করবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ার কবীর (আ.লীগ) বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত করে দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমি সংসদ নির্বাচনে এসে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে সদ্য পদত্যাগ করেছি। দায়িত্বপালনকালে অনেক উন্নয়ন করেছি, অনেক কর্মপরিকল্পনাও রয়েছে আমার। এমপি নির্বাচিত হয়ে তা বাস্তবায়ন করবো। প্রচারণায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমার পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

রিপন আকন্দ/এমএএস