নির্বাচনে চমক দেখালেন ময়মনসিংহের ৭ প্রার্থী
ময়মনসিহের ১১টি আসনের মধ্যে ৭ প্রার্থী জীবনে সংসদ নির্বাচনে চমক দেখিয়ে জয়ী হয়েছেন। আর তাদের মধ্যে ছয়জনই লড়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। আর একজন দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ভোটে জিতে এমপি হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে বড় ব্যবধানে হারানো এই প্রার্থীদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ।
ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট) ধোবাউড়া আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান জুয়েল আরেংকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার অংশ নেওয়া মাহমুদুল হক সায়েম। প্রায় ২০ হাজার ভোট বেশি পেয়ে এমপি হয়েছেন সায়েম। স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমান এমপির জনসম্পৃক্ততা ছিল কম। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না করা, নেতাকর্মীদের দূরে ঠেলে দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণেই ফলাফল জুয়েল আরেংয়ের বিপক্ষে গেছে। অন্যদিকে ভারতীয় সীমান্ত জনপদের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন ঘটানোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষ তাকে প্রয়োজনে কাছে পাওয়ায় তারা তার পক্ষে রায় দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে জয় পাওয়া নৌকার প্রার্থী মোহিত উর রহমান শান্ত এবারই প্রথম কোনো নির্বাচনে লড়েছেন। হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক শামীমকে ৪৪ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেছেন তিনি। শান্ত প্রথম ভোটের মাঠে জয় পেলেও তার বাবা ছিলেন সাবেক দুইবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী প্রয়াত অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ছেলে। ময়মনসিংহের আওয়ামী রাজনীতির সিংহপুরুষ বলা হয় প্রয়াত অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। দলমত নির্বিশেষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ছিলেন তিনি। মৃত্যুর পর জানাজাতেও ছিল বিপুল মানুষের উপস্থিতি। গত ১০ বছর জাপার রওশন এরশাদকে আসনটি আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিলেও এবার বাবার রেখে যাওয়া নৌকা তুলে দেওয়া হয় ছেলে শান্তকে। বাবার জনপ্রিয়তা ও অবদানের কথা স্মরণে রেখে ছেলে শান্তকেই জয়ী করেন ময়মনসিংহ সদরের ভোটাররা।
মোহিত উর রহমান শান্ত বলেন, আমার বাবা নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে সদরবাসীকে আগলে রেখেছেন। তারাও সদরের সন্তান হিসেবে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। আমিও সারাজীবন সদরবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে থাকব।
বিজ্ঞাপন
ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম। তিনি এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সবাইকে চমকে দিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তিকে ১৮ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেন নজরুল ইসলাম। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলামকে সমর্থন দেন নৌকা পেয়েও জাপার সঙ্গে আসন সমঝোতায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই। মূলত হাইয়ের সমর্থনের কারণেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন মুক্তিকে পরাজিত করেন নজরুল ইসলাম।
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিনকে পরাজিত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মালেক সরকার। তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও একবার উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়া মালেক এবারই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। প্রথমবারেই বাজিমাত করেন তিনি। আওয়ামী লীগ থেকে পাঁচবারের এমপি ও একবার গণপরিষদ সদস্য ছিলেন মোসলেম উদ্দিন। পারিবারিক দ্বন্দ্ব মালেকের জয়ে নিয়ামক হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে এমপি হয়েছেন পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবিএম আনিছুজ্জামান। নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি হাফেজ রুহুল আমীন মাদানীকে হারিয়ে তিনি এমপি হন। এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় এবিএম আনিছুজ্জামান স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে তিনবার পৌরসভা মেয়র হয়েছিলেন। এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েই চমক দেখালেন তিনি।
এবিএম আনিছুজ্জামান বলেন, এলাকার উন্নয়নে আগের এমপি কোনো ভূমিকা রাখেনি। মানুষের কষ্ট লাঘব করাই হবে আমার প্রথম কাজ।
ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান সুমন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমামকে প্রায় ২৯ হাজার ভোটে হারিয়ে এমপি হয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই এমপি হয়ে গেছেন।
দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান থাকায় তৃণমূল মানুষের জন্য কাজ করায় কারণেই তিনি এমপি হয়েছেন জানিয়ে সুমন বলেন, এলাকার মানুষ দীর্ঘ ১০ বছর পর নিজেদের এমপি পেয়েছে। মানুষের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন কাজগুলো করে যাব।
ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে বাজিমাত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ। আইনী লড়াই শেষে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনুকে প্রায় ৩৯ হাজার ভোটে হারিয়ে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন সবাইকে। প্রথমবার এমপি হওয়া আবদুল ওয়াহেদ বলেন, শিল্পাঞ্চল খ্যাত ভালুকার মানুষকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকদের সমস্যা চিহ্নিত করে কাজ করে যাব।
উবায়দুল হক/আরকে