দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে নতুন মন্ত্রীসভায় জায়গা পেয়েছেন চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়াকে ৮৩ হাজার ৯৬৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে তিনি জয়ী হন।

আসনের ১৬৫টি কেন্দ্রে দীপু মনি পেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ১৬৬ ভোট। অপরদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া (ঈগল) পেয়েছেন ২৪ হাজার ১৯৭টি ভোট। এ হিসেবে ৮৩ হাজার ৯৬৯ ভোটে ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়াকে পরাজিত করেছেন।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৭ জন প্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের আলহাজ্ব ডা. দীপু মনি (নৌকা),স্বতন্ত্র ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া (ঈগল), মো. রেদওয়ান খান (ট্রাক), জাতীয় পার্টির মো. মহসীন খান (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মো. মিজানুর রহমান পেয়েছেন (ফুলের মালা) ও জাকের পার্টির মো. কাওছার মোল্লা (গোলাপ ফুল)।

এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৯৩ জন। নারী ভোটার ২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২ জন। একটি পৌরসভা, ২টি উপজেলা ও ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসন।

এদিকে দীপু মনি মন্ত্রীসভায় ডাক পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন চাঁদপুরবাসী।

চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদী এলাকার বাসিন্দা রমজান আলী মৃধা বলেন, আমরা নৌকায় ভোট দিয়েছি। ডা. দীপু মনি আবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। মাননীয় প্রধামন্ত্রী আমাদের মূল্যায়ন করেছেন। তিনি দীপু আপাকে আবারও মন্ত্রী বানিয়েছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ।

ব্যাংক কলোনী এলাকার শামীম জানান, দীপু মনি আবারও মন্ত্রী হচ্ছেন। একথা শোনার পর আমার আজ ঈদের মতো লাগছে। কারণ  দীপু মনি একজন ভালো মনের মানুষ । দেশের উন্নয়ন করেছেন। 

হাইমচরের উপজেলার আলগী বাজার এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জানান, দীপু আপা ২০০৮ সালে নির্বাচিত হাওয়ার পর থেকে আমাদের ব্যাপক উন্নয়ন করছেন। আপা আমাদের সুখে-দুঃখের বন্ধু। আপা আবারও মন্ত্রী হয়েছেন। আমরা খুবই খুশি হয়েছি।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ড. হাসান খান বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আপা মন্ত্রীসভায় শপথ নিয়েছেন। তার পরিশ্রম মহান আল্লাহ সার্থক করেছেন। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি ও মাননীয় প্রধামন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আইয়ুব আলী বেপারী জানান, আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের দীপু আপার আবারও মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। তবে তিনি কোন মন্ত্রালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন তা এখনো জানা যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি আমাদের আপাকে আবারও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। আশা করি শেখ হাসিনা দীপু মনিকে গত দুইবারের ন্যায় এবারও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেবেন। আবারও দীপু মনি মন্ত্রী হওয়ায় চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ এবং জনগণ খুশি।

দীপু মনি ১৯৬৫ সালের ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের রাঢ়ীরচর গ্রামের পাটোয়ারী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা একুশে পদক বিজয়ী ভাষা আন্দোলন কর্মী ও রাজনীতিবিদ এম.এ ওয়াদুদ। মা রহিমা ওয়াদুদ শিক্ষিকা ছিলেন। ২ ভাই বোনের মধ্যে একমাত্র ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপু একজন চিকিৎসক। স্বামী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট তৌফিক নাওয়াজ।

দীপু মনি ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর- ৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর-৩ আসনে ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী শিক্ষামন্ত্রী। এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে করছেন।এবার আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হয়েই মন্ত্রী হওয়ার ডাক পেলেন। এ নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য এবং তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রী হলেন তিনি। 

আনোয়ারুল হক/আরকে