চলন্ত লঞ্চ থেকে নামিয়ে যুবককে রাতভর নির্যাতন
চোর সন্দেহে সোহাগ মুন্সি (২৭) নামের এক যুবককে চলন্ত লঞ্চ থেকে নামিয়ে স্পিডবোটযোগে অন্য জায়গায় নিয়ে রাতভর নির্যাতন করা হয়েছে। এ সময় চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ওই যুবকের হাত ও পায়ের অঙুলে সুই ফোড়া হয়েছে।
আহত ওই যুবককে উদ্ধার করে রোববার সন্ধ্যায় বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে।
আহত সোহাগ একই ইউনিয়নের চরওয়াডেল গ্রামের বাসিন্দা মো. ওমর আলী মুন্সির ছেলে। তিনি পেশায় জেলে। আহত যুবকের স্বজন, স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বাবা ওমর আলীর সঙ্গে রাগ করে গত শনিবার বিকেলে কালাইয়া লঞ্চঘাট থেকে এমভি ঈগল লঞ্চে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন সোহাগ। রাত সোয়া সাতটার দিকে লঞ্চটি ধূলিয়া ঘাটে পৌঁছায়। ওই সময় সোহাগের প্রতিবেশী মো. লোকমান খানের (৩০) নেতৃত্বে ছয়-সাতজনের একটি দল স্পিডবোটে করে ওই লঞ্চে ওঠে সোহাগকে জোরপূর্বক নামিয়ে নিয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গত বুধবার দিবাগত রাতের যেকোনো সময় লোকমান খানের দুটি ও আলী আহম্মেদ খানের চারটি গরু চুরি হয়। ওই ছয়টি গরু চুরির সন্দেহে সোহাগকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে চর রায়সাহেব এলাকায় নদীর পাড়ে নিয়ে সোহাগকে প্রথম দফায় পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে মোটরসাইকেলে করে একটি মাছের ঘেরের কাছে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় নির্যাতন করে আকবর আলীর ঘরে নিয়ে আটকে রাতভর নির্যাতন করা হয়।
সেখান থেকে রোববার বেলা ১১টার দিকে চরওয়াডেল খানকা এলাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিয়ে মারধর করা হয় গরু চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য সোহাগের হাত ও পায়ের আঙুলে সুই ফোড়া হয়।
বিজ্ঞাপন
পরে স্থানীয় চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে সোহাগকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। ইউপি
চেয়ারম্যান এনামুল হক ওরফে আলকাচ মোল্লা বলেন, গরু চুরির অভিযোগে মারধর করেছে, এ ঘটনা সত্য। যেহেতু চুরির কোনো প্রমাণ নাই, তাই তাকে (সোহাগ) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।
এ বিষয়ে জানার জন্য লোকমানের মোবাইলে কল করলে বন্ধ পাওয়া যায়। তার বড় ভাই মো. ফোরকান বলেন, গরু চুরির বিচারের খবর পেয়ে সোহাগ পালিয়ে যাচ্ছিল। এ কারণে তাকে ধরে আনার পর কয়েকটি চড়-থাপ্পর দেওয়া হয়েছে। নির্যাতনের অভিযোগ সত্য না। তবে তিনি সোহাগকে আটকে রাখার কথা স্বীকার করেছেন।
এ ঘটনায় বাউফল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোনিত কুমার গায়েন বলেন, ঘটনাটি তাকে কেউ জানায়নি। তবে কাউকে চুরির অভিযোগে আটক করে মারধর করার কোনো সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরিফুল ইসলাম সাগর/এমএএস