দখলমুক্ত হলো ফরিদপুর শহরের আলিমুজ্জামান সেতু
সংসদ নির্বাচনের পর হকারমুক্ত হয়েছে ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আলিমুজ্জামান সেতু। হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজার ও নিউমার্কেটের সংযোগ স্থাপনকারী কুমার নদের উপরে সর্বসাধারণের জন্য পায়ে হেঁটে চলাচলের বেইলি সেতুটি দখলমুক্ত করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পুলিশ জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতুর উপর ও বিশেষ ব্যবস্থায় দুইপাশ দিয়ে অবৈধভাবে বসা হকারদের সরিয়ে দিয়ে সেতুটি দখলমুক্ত করা হয়। বর্তমানে সেতুটি দখলমুক্ত রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এই বেইলি সেতু দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেন। শহরের বাইরের থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ শহরের প্রবেশ মুখ পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে নেমে শরীয়তুল্লাহ বাজার হয়ে পায়ে হেঁটে নিউ মার্কেট, চকবাজার, থানার মোড়সহ বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করেন। শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে চলার জন্য নির্মিত সেতুটি গত সাড়ে তিন বছর যাবৎ অবৈধ ফুটপাত দখলদারদের কাছে জিম্মি হয়েছিল। টাকার বিনিময়ে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র পায়ে হাঁটার এই সেতুটিকে হকারদের কাছে দোকানপ্রতি ভাড়া দিয়ে আসছিল। ফলে প্রতিনিয়তই নাজেহাল হতে হতো সাধারণ পথচারীদের। ছিনতাই, পকেটমারসহ ছোটখাটো অঘটন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। বিশেষ করে নারীদের জন্য এই বেইলী ব্রিজ ছিল খুবই অনিরাপদ। ভিড়ের সুযোগে যৌন হয়রানির ঘটনা ছিল নিত্য নৈমত্তিক।
সংসদ নির্বাচনের পর গত পাঁচদিন যাবৎ জনগুরুত্বপূর্ণ এই বেইলি সেতুটি সম্পূর্ণ হকারমুক্ত করে দিয়েছে প্রশাসন। ফলে সাধারণ মানুষ স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যে পায়ে হেঁটে সেতুর এপার ওপার যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে।
বিজ্ঞাপন
ফরিদপুর শহরের পূর্ব খাবাসপুর মহল্লার বাসিন্দা সুজন মাহমুদ বলেন, এই বেইলি ব্রিজে রাত ১০টার সময়ও প্রায় হাটাহাটির কারণে মানুষের ভিড় লেগে থাকে। তার ওপর হকাররাই ব্রিজের অর্ধেক দখল করে থাকত। এখন ব্রিজটা দেখতেই ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এখন চলাচলে মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে এসেছে।
নিউমার্কেটের কসমেটিকস ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রুবেল বলেন, বেইলি ব্রিজের উপর ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা একই মোড়কের নকল পণ্য কম দামে বিক্রি করত। এজন্য আমরা বিপাকে পরতাম। ক্রেতারা সব সময় বলত, ব্রিজে যেটা ৪০ টাকায় পাওয়া যায় সেটা আপনারা ৬০ টাকা নেন কেন। ক্রেতাদের বোঝাতেও কষ্ট হত যে মোড়ক একই হলেও পণ্য নকল। এসব বিষয় আমাদের বিব্রত করত। এখন শহরের প্রবেশমুখে ফুটপাতের দোকান না থাকায় আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না।পাশাপাশি বিক্রিও বাড়বে।
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক পান্না বালা বলেন, সেতুতে হকার উচ্ছেদ ভালো উদ্যাগ। তবে এটা যেন বজায় থাকে এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কয়েকদিন পর আবার নতুন হকার যেন না বসতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, বেইলি সেতু দখলমুক্ত করা হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি এখন থেকে দখলমুক্ত থাকবে। পাশাপাশি ফরিদপুর শহরের যেসব স্থানে অবৈধভাবে ফুটপাত দখলের কারণে জনগণের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে সেসব স্থান থেকে অভিযোগ পেলে পুলিশ জনগণের চলাচল স্বাভাবিক ও নিরাপদ রাখতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে সেগুলোও উচ্ছেদে উদ্যোগ নেবে।
জহির হোসেন/আরকে