ভাসমান শ্রমিকের হাট
তীব্র শীতে এক দিন কাজ মিললে তিন দিন নাই
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী বাজারে প্রতিদিন ভাসমান শ্রমিকের হাট বসে। সকালে আড়মোড়া ভাঙার আগেই শ্রমিকদের উপস্থিতিতে এলাকাটি সরব হয়ে ওঠে। সময় যতই গড়ায় শ্রমিকদের সংখ্যাও তত বাড়তে থাকে। সকাল নয়টার মধ্যে আবার ভিড় কমে যায়। ফের বিকেলে শ্রমিকদের উপস্থিতিতে এলাকাটি সরব হয়ে ওঠে। সময় যতই গড়ায়, শ্রমিকদের সংখ্যাও তত কমতে থাকে। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজন দৈনিক চুক্তিতে এখান থেকে শ্রমিক নিয়ে যান। তবে গত কয়েক দিনের ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় তাদের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে।
তীব্র শীতে ভোগান্তিতে পড়েছে ভাসমান শ্রমিকের হাটের শ্রমিকরা। গত এক মাস ধরে নিয়মিত কাজ মিলছে না বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ শ্রমিক।
বিজ্ঞাপন
পার্শ্ববর্তী জেলা লক্ষ্মীপুর থেকে আসা শ্রমিক মিলন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, রামগতি থেকে কাজের সন্ধানে এখানে আমরা সাতজন এসেছি। গত তিনদিন ধরে কোনো কাজ পাইনি। বাড়ি থেকে ঋণ করে টাকা এনে কোনো রকম খেয়ে বেঁচে আছি। অনেক জেলা থেকে এখানে শ্রমিক আসে কিন্তু কাজ তেমন নাই বললেই চলে।
বিজ্ঞাপন
সুবর্ণচরের চরজব্বর ইউনিয়নের বাসিন্দা আলতাফ মিয়া প্রায় চার বছর ধরে চৌমুহনীতে থাকেন। এই শ্রমিক হাটের একজন নিয়মিত সদস্য তিনি। কাজ নেই বলে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সময় পার করছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘শীত আসার পর থেকে কাজ নাই। গত ১৫ দিনের মধ্যে তিন দিন কাম করছি। বাড়িতে পাঁচ-ছয় জন মানুষ। সংসার কেমনে চলব জানি না।’
হাতিয়া উপজেলার শ্রমিক সাহাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পারিশ্রমিক কম দিলেও যা কাজ পাই তাই করি। বেঁচে থাকতে হলে তো কাজ করতে হবে। সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। কেউ কাজ পায় আবার কেউ পায় না। আবার বিকেলে আসি। কাজ না পেলে এরপর কোদাল লইয়া (নিয়ে) ফেরত যাই।
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এখন মেশিন বের হয়ে আমাদের প্রয়োজন কমে গেছে। ১০০ জনের কাম এক ঘণ্টায় মেশিন কইরালায় (করে ফেলে)। ধান কাটার মেশিন বাইর করছে। আবার ধান রোপণ করার মেশিনও বের হইসে। এসব আমগো মতো গরিবরে মারার মেশিন।’
চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী ফাহিয়াজ উদ্দিন ইফতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতে চৌমুহনীর এই শ্রমিক বাজারে শ্রম বিক্রি করতে আসা শ্রমিকদের কাজ কমে গেছে। নির্মাণ শ্রমিক, মালী, রাজমিস্ত্রী, কাঠমিস্ত্রি থেকে শুরু করে নানা কাজের শ্রমিকেরা ভিড় করেন এখানে।
রোদসহ নানা কিছুর ওপর নির্ভর করে শ্রমিকদের কাজ পাওয়া। কাজ না পেলে বেকার সময় কাটাতে হয়। স্থায়ী কাজ না থাকায় অনেকে অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে। কেউ কেউ রাতের বেলায় রেলস্টেশনেই থাকে।
নোয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাতে তাপমাত্রা কমে তখন প্রচুর শীত অনুভব হয়। আবার দিনে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। নোয়াখালীতে আজ সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শীত আরও কিছুদিন থাকবে।
হাসিব আল আমিন/এএএ