ফেরির সহকারী ইঞ্জিন চালক হুমায়ুন কবির

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় রজনীগন্ধা ফেরি ডুবির ছয় দিনের মাথায় ফেরির সহকারী ইঞ্জিন চালক হুমায়ুন কবিরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে ভাটিতে ভাসমান অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে মৃত হুমায়ুন কবিরের ভাই রফিকুল ইসলাম মরদেহটি শনাক্ত করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ে ডিজিএম (বাণিজ্য) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, আজকে বেলা ৪টার দিকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার ভাটিতে হরিরামপুর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে রজনীগন্ধা ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন চালক হুমায়ুন কবিরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, বাহাদুরপুর পদ্মা নদীতে হুমায়ুনের মৃতদেহ মিলেছে। তার মৃতদেহ পাঁচ নম্বর ঘাটে নিয়ে এসেছে ফায়ার সার্ভিস। দুপুরের হরিরামপুর উপজেলার বাহাদুরপুর পদ্মা নদীতে তার মৃতদেহের সন্ধান মেলে। যা ঘটনাস্থল থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে।

মৃত হুমায়ুন কবিরের ভাই রফিকুল ইসলামের আহাজারি

বিআইডব্লিউটিসি ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নদীতে ঘন কুয়াশার কারণে ফেরির মার্কিং বাতির আলো অস্পষ্ট হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। রাত একটায় নয়টি যানবাহন নিয়ে রাজবাড়ির দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয় ফেরি রজনীগন্ধা। নৌপথে ঘন কুয়াশার কারণে দিক ঠিক না পাওয়া পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ৫নং ঘাট পন্টুন থেকে ২০০ মিটার দূরে ফেরিটি নোঙর করে রাত আড়াইটার দিকে। এরপর বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে সাতটা দিকে ফেরির তলা ফেটে পানি ঢুকতে শুরু করে এবং সকাল আটটার দিকে ফেরি রজনীগন্ধা একদিকে কাত হয়ে নয়টি যানবাহন নিয়ে পদ্মার পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় জীবন বাঁচাতে ফেরিতে থাকা ট্রাক চালক, সহকারী ও ফেরি মাস্টারসহ স্টাফরা নদীতে ঝাঁপ দেয়। 

এ ঘটনার পর পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জীবিত ছয়জনকে উদ্ধার করে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন ব্যক্তি সাঁতরে নদীর তীরে ওঠেন। ফেরিটি পানিতে তলিয়ে যাওয়া সময় ফেরিতে থাকা ট্রাক চালক, সহকারী ও ফেরির স্টাফসহ ২১ জন ব্যক্তি ছিল। ফেরিডুবির ঘটনায় ২০ জন ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার হলেও দুর্ভাগ্যবশত ফেরিটির সহকারী ইঞ্জিন চালক হুমায়ুন কবির ফেরি থেকে বের হতে পারেননি।

ফেরিডুবির ঘটনার পর পরই দৌলতদিয়া ঘাট থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ঘটনাস্থলে এসে ডুবে যাওয়া ফেরি থেকে ভেসে যাওয়া দুটি ট্রাক উদ্ধার করে। দ্বিতীয় দিন বুধবার ১৮ (জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে আসে রুস্তম নামে আরেক উদ্ধারকারী জাহাজ। ওই দিন রুস্তম আরেকটি ট্রাক উদ্ধার করে। উদ্ধার অভিযানের তৃতীয় ও চতুর্থ দিনে কোনো অর্জন না থাকলেও পঞ্চম দিন ও ষষ্ঠ দিনে হামজা দুটি ট্রাক উদ্ধারসহ মোট পাঁচটি যানবাহন উদ্ধার করা হয়।

সোহেল হোসেন/এএএ