জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই বেজে গেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনের ডামাডোল। আগামী ৯ মার্চ মসিকের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এমন খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে নগরীর সর্বত্রই বইতে শুরু করেছে ভোটের হাওয়া। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরাও অনলাইন-অফলাইনে নিজেদের প্রার্থীতা জানান দিতে শুরু করেছেন।

তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো, সিটি নির্বাচনেও বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছে দলটির স্থানীয় শীর্ষ নেতারা। নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি প্রতিহত করতেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে রাজপথে থাকার ঘোষণা তাদের। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপি না আসলেও ভোট হবে উৎসবমুখর। সিটি নির্বাচনে তিনটি স্তরে ভোট হওয়ায় আরও বেশি ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাবেন বলে আশা তাদের।  

মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করবে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমাদের একই সিদ্ধান্ত রয়েছে। সিটি নির্বাচন বর্জনের আহ্বানের পাশাপাশি প্রতিহতের ব্যাপারে কেন্দ্রীয়ভাবে যে কর্মসূচি আসবে আমরা সেটিই অনুসরণ করব। অন্যদিকে আমাদের মধ্যে যদি কেউ ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে অবশ্যই তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। 

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ৪০ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন একটি স্থানীয় নির্বাচন। এক্ষেত্রে স্থানীয় সাধারণ নাগরিক আছেন তাদের সঙ্গে এটি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। এ ছাড়া এখানে যেহেতু মেয়র পদের পাশাপাশি কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এই তিনটি স্তরে নির্বাচন হবে সেহেতু স্বাভাবিক অর্থেই ভোটাররা আরও বেশি উপস্থিত হবেন এবং উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে বলে আমরা মনে করি। স্থানীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাদের পছন্দমাফিক প্রার্থী নির্বাচন করেন সে ব্যাপারে আমাদের দলের পক্ষ থেকেও নাগরিকবৃন্দকে উদ্বুদ্ধ করা হবে। 

২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনের ঘোষণার গেজেট প্রকাশ হয়। এরপর ২০১৯ সালের ৫ মে এই সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ওই নির্বাচনে বিএনপি থেকে বা বিরোধী কোনো প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন মো. ইকরামুল হক টিটু। ওই ভোটে ১২৭টি ভোটকেন্দ্রে শুধু মসিকের ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১১টি সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত পদগুলোতে নির্বাচন হয়েছিল। ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ৯১ দশমিক ৩১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই নগরীতে মোট ভোটার তিন লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৮ জন।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে বিএনপি না এলেও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটুর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মেয়র পদে প্রার্থী হতে আগ্রহী। তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাদেক খান মিল্কি টজু এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও প্রয়াত পৌর মেয়র মাহমুদ আল নূর তারেকের ছেলে অ্যাডভোকেট ফারমার্জ আল নূর রাজীব। 

তবে নগরের উন্নয়ন, ‘ক্লিন ইমেজ’ ও জনসম্পৃক্ততা বিবেচনায় মনোনয়নের ক্ষেত্রে ও ভোটের মাঠে বর্তমান সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটুর ওপরই দল ও ভোটাররা আস্থা রাখবেন বলে মনে করছে স্থানীয়রা। বাসিন্দাদের সঙ্গে মেয়রের আন্তরিকতা এবং নগরকে ঢেলে সাজাতে তিনি যেভাবে কাজ করছেন আধুনিক নগরী গড়তে অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নে মেয়র টিটুই প্রথম পছন্দ ভোটারদের। 

এ ব্যাপারে মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর নগরবাসীর জন্য সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু করোনা মহামারি এবং বৈশ্বিক সংকটের কারণে আমাদের যে বৃহৎ পরিকল্পনা ছিল তা অনেকাংশে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন। ফলে অনেকাংশে উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আরও বলেন, আশা করি দল আমাকে আবারও মনোনয়ন দিয়ে ময়মনসিংহবাসীর সেবা করার সুযোগ দেবেন। সকলের দোয়া ও নগরবাসীর ভোটে নির্বাচিত হতে পারলে অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করে একটি সমৃদ্ধ ময়মনসিংহ গড়ব।

উবায়দুল হক/এএএ