বকদের ভয় দেখাতেই বক মেরে ঝুলিয়ে রাখলেন কৃষক
রোপণ করা বোরো ধানের খেত যাতে নষ্ট না হয় এজন্য বক মেরে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে কাকতাড়ুয়ার মতো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ধানের খেতে কোনো পাখি যেন খাবারের জন্য বসতে না পারে সেই উদ্দেশ্যে পাখিদের ভয় দেখাতেই এমনটি করেছেন অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক। টানা ৫ দিন ধরে মরা বক ঝুলিয়ে রেখে পাখি তাড়ানো বা ভীতি তৈরি করার চেষ্টার ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর মহানগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ময়নাকুটি খলেয়ার দোলায় আমিনুর রহমান মাস্টারের জমিতে।
বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টায় রংপুর মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে ঝুলিয়ে রাখা বকটি সেখান থেকে অপসারণ করেন।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদ্য রোপন করা একটি ধানের জমির মাঝখানে একটি সাদা বক মেরে গলায় দড়ি দিয়ে তিন খুঁটি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ৫ দিন ধরে এভাবেই ঝুলিয়ে রাখা হয় মরা বকটি। ফলে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। জমির মালিকের দাবি, বকের দল সদ্য রোপণ করা রোপা বোরো জমি নষ্ট করার কারণে এমনটা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোরো ধানের রোপণ করার পর খেতের মধ্যে অনেকগুলো বকের দল এসে হাটাহাটি করে। তাতে করে সদ্য রোপণ করা ধান ক্ষেত নষ্ট হয়। আবার নতুন করে চারা রোপণ করতে হয়। এ কারণে একটি বক মেরে ঝুলিয়ে রাখেন জমির মালিক হারাটি দ্বিমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শরীরচর্চা শিক্ষক আমিনুর রহমান। বক মেরে ঝুলিয়ে রাখার কারণ হিসেবে জানা যায়, এই ঝুলিয়ে রাখা বক দেখে যাতে অন্য কোনো বক আর ভয়ে জমিতে না আসে বা ক্ষতি করতে না পারে।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে জমির মালিক আমিনুর রহমান বলেন, বিষয়টি তার জানা ছিলো না। কে বা কারা এই কাজটি করেছেন। তবে ৫ দিন ধরে জমিতে ঝুলিয়ে রাখা আছে, এতোদিনেও বিষয়টি দেখেননি কিংবা শোনেননি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
আমিনুর রহমান কৌশলে এর দায় অস্বীকার করলেও তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, বক মারা বেআইনি, তা আমার জানা নেই। তবে এই বক অন্য এক জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছি। কাজটি আমার না-জানার কারণে হয়েছে। আশা করি এমন ভুল আর হবে না। মূলত অন্য পাখিদের ভয় দেখানোর জন্য কাজটি করা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
এদিকে বিষয়টি গণমাধ্যমের মারফতে জানতে পেরে রংপুর মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বকটি অপসারণ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ ধরনের কাজ না করেন এজন্য কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কথা জানান তিনি।
এদিকে বক মেরে এভাবে খেতের মধ্যে ঝুলিয়ে রাখার বিষয়ে নদী ও পশুপাখি গবেষক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, পৃথিবীটা শুধু মানুষের জন্য নয়। পশুপাখি, জীবজন্তু, পোকামাকড় সবকিছু নিয়ে একটা জীবনচক্র। পাখি মারা আইনগতভাবেই নিষেধ। সেই পাখি মেরে ঝুলিয়ে রাখা অমানবিক ঘটনা।
বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, পাখি প্রকৃতির আইন অনুযায়ী এদের ধরা, হত্যা করা, মাংস খাওয়া, বাসায় পোষা, দখলে রাখা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রকৃতি সুরক্ষায় শিকার নিষিদ্ধ পাখি শিকার, বিক্রি ও হত্যা করা আইনগতভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধ দমনে প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ লোকজনদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
অন্যদিকে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রিয়াজ উদ্দিন জানান, ক্ষতিকর পোকামাকড় পাখি খেয়ে থাকে। এখানে কৃষকের উপকার হয়। তাছাড়া কীটনাশক ব্যবহার করে পোকামাকড় দমনে আমরা কৃষককে অনুৎসাহিত করে থাকি। আমরা বিকল্প উপায় হিসেবে জমির মধ্যে কয়েকটি খুঁটি দিতে বলি। যাতে পাখিরা খুঁটিতে বসে জমির ক্ষতিকর পোকামাকড় খেতে পারে। কিন্তু ওই কৃষক যে কাজটি করেছে সেটি আইনগতভাবে অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজ। ভবিষতে যাতে কোনো কৃষক এ ধরনের কাজ না করে সেই বিষয়ে আমরা কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করব।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস