জামালপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ভারত সরকারের দেওয়া উপহারের লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্সটি উপহার দিয়েছিল ভারত।

হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের উপহারের অ্যাম্বুলেন্সটি ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে হাসপাতালে দেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সটি পাওয়ার পর থেকে জামালপুর থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যন্ত শুধুমাত্র দুই বার যাতায়াত করেছে। জনবল সংকট ও অতিরিক্ত জ্বালানি তেল খরচ হওয়ার কারণে পড়ে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্সটি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের পেছনে একটি টিনের ছাউনির নিচে পরিত্যক্ত অ্যাম্বুলেন্সের পাশেই বাংলাদেশ-ভারতের পতাকা সংবলিত ভারতের উপহারের লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্সে ধুলাবালির আস্তর জমেছে। দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন ও অবহেলায় একই জায়গায় পড়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অ্যাম্বুলেন্স চালু না করাই ব্যাটারিসহ সরঞ্জাম নষ্ট হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২১ সালের মার্চে বাংলাদেশে আসেন। তখন ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। 

এসব অ্যাম্বুলেন্সে একটি আইসিইউ পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, জরুরি ওষুধ, ইনকিউবেশন সেট, অক্সিজেন সিলিন্ডার, সাকশন মেশিন, নেবুলাইজার মেশিন, ক্যাথেটার, বিপি স্টেথো, পালস অক্সিমিটার, কার্ডিয়াক মনিটর পালস, স্যাচুরেশন, তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র, মনিটর ব্যবস্থা, পথেই রোগীর হৃদস্পন্দন ভেন্ট্রিকুলার টাকাইকার্ডিয়া (ভিটি) এবং ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন (ভিএফ) সুবিধা রয়েছে। ২০২১ সালে ধাপে ধাপে এ অ্যাম্বুলেন্সগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করে ভারত।

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য মুমূর্ষু রোগীদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রয়োজন পড়ে। কিছু রোগীর আইসিইউ সেবার দরকার হয়। হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট থাকলেও চালু নেই। কিছু মুমূর্ষু রোগী থাকে যাদের আইসিইউ সেবা প্রয়োজন হয়। আর জামালপুরে প্রাইভেট কোনো আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নেই‌।

হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক রোমান আহমেদ বলেন, হাসপাতালের তিনটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এর মধ্যে ড্রাইভার আমি একাই, আমি ময়মনসিংহ যাচ্ছি এখন। ওই জায়গায় এখন ফাঁকা। প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে অনেক।

জামালপুরের নাগরিক কমিটির সভাপতি ও জামালপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সটি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এভাবে পড়ে থাকলে অ্যাম্বুলেন্স একেবারে নষ্ট হয়ে পড়বে। এই অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করার জন্য হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলব।

এদিকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহফুজুর রহমান সোহান এই অ্যাম্বুলেন্স সম্পর্কে গণমাধ্যমে কোনো কথা বলবেন না বলে জানান।

রকিব হাসান নয়ন/আরএআর