প্রসববেদনা নিয়ে গত ২২ জানুয়ারি উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালে রজিনা আক্তার নামের এক প্রসূতি মা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। রজিনা কালীগঞ্জ উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামের ইকবাল হোসেনের স্ত্রী। 

স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মদানের জন্য অস্ত্রোপচারের স্থান ও চিকিৎসক ভেদে মোটা অঙ্কের ব্যয় বহন করতে হয় রোগীকে। কিন্তু সরকারি এই হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের কোনো খরচ ছাড়াই প্রসূতি রজিনা চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালের এই সেবায় অভিভূত রজিনা আক্তার ও তার পরিবার। আর এভাবেই কোনো খরচ ছাড়াই রজিনা আক্তারের মতো ৪ শতাধিক রোগীর অস্ত্রোপচার করেছেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর হোসেন।

জানা যায়, ২০২১ সালে উপজেলার ২০তম স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে তিনি বিনামূল্যে ৪০১ জন রোগীকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। এর মধ্যে ৩১৩ জন প্রসূতি মায়ের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের সেবা দেন তিনি। ২০২২ সালে ১৬৬ জন এবং ২০২৩ সালে ১৪৭ জন প্রসূতি মায়ের অস্ত্রোপচার করেন। এ ছাড়া তিনি গত দুই বছরে ৫০ জনের অ্যাপেন্ডিসাইটিস, ১০ জনের হার্নিয়া, ২ জন রোগীর হাইড্রোসিল এবং ২৬ জনের সুন্নতে খতনার অপারেশন করেন কোনো অর্থ ছাড়াই।

আকলিমা নামে এক রোগী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডা. আলমগীর হোসেন হাসপাতালে রোগী দেখেন সময় নিয়ে, রোগীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন, এমনকি নিজের পকেটের টাকা দিয়ে অনেক গরিব রোগীর নানা পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ ওষুধ কেনার ব্যবস্থা করে দেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এমন সেবায় স্থানীয়রা সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ইতিমধ্যে অনেকেই তাকে ‘গরিবের ডাক্তার’ বলে ডাকতে শুরু করেছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ফারহানা আকতার মুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্যার শুধু ভালো ডাক্তারই নন একজন ভালো প্রশাসক হিসাবেও সহকর্মীদের নিকট প্রিয়ভাজন মানুষ। স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়াতে নিজ উদ্যোগে হাসপাতাল চত্বরে ফুলের বাগান, সাইকেল গ্যারেজ, নার্সদের একটি নতুন ডিউটি কক্ষ (ব্যক্তিগত অর্থায়নে), আলট্রাসনোগ্রাফি ও এক্সরে মেশিন সচল, ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে অপারেশন থিয়েটারের জন্য একটি জেনারেটরও প্রদান করেছেন। এ ছাড়া ইপিআই টিকা, সাপে কাটা এবং কুকুর বিড়ালের কামড়ের জন্য প্রয়োজনীয় টিকা শেষ হওয়ার আগেই চাহিদাপত্র দিয়ে আগে থেকেই সংগ্রহে রাখার চেষ্টা করেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিকিৎসা সেবা একটি মহৎ পেশা। যোগদানের পর থেকে সকল সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলাবাসীর চিকিৎসা সেবায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে পারলে নিজের মধ্যে অন্যরকম এক আনন্দের অনুভূতি কাজ করে। ইতিমধ্যে আমি ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নিতকরণ, বলরামপুর ও বারবাজার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১০ শয্যার বেড স্থাপন, পুরো হাসপাতাল এলাকায় জরাজীর্ণ পুরাতন প্রাচীরের স্থানে নতুনভাবে বাউন্ডারি দেওয়া, নতুন দুইতলা ভবনের ওপর ৩য় তলা নির্মাণ ও একটি কনফারেন্স কক্ষের জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছি। এই কাজগুলোর বাস্তবায়ন হলে সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রাণী দেবনাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিকিৎসক হিসেবে আলমগীর হোসেন অনেক ভালো। প্রশাসক হিসেবেও ইতিমধ্যে হাসপাতালে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তিনি। হাসপাতালের সকল কার্যক্রম পরিচালনার বিশেষ প্রয়োজন হলে আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন।

তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে হঠাৎ করে সারা দেশে স্যালাইনের সংকট দেখা দিলেও কালীগঞ্জ হাসপাতালে কোনো সংকট ছিল না। সে সময় তিনি তার দূরদর্শিতায় হাসপাতালে স্যালাইন সরবরাহ সচল রেখেছিলেন। রোগীদের সরকারি ওষুধ সরবরাহ ঠিক রেখেছেন। প্রসূতি মায়েদের জন্য ১০ বেডের একটি আলাদা ওয়ার্ড ও হাসপাতালে স্থাপন করেছেন। উপজেলার সরকারি এ হাসপাতালে ১৭ জন ডাক্তারসহ মোট ১৩৮ জন স্টাফের যথাযথ দায়িত্ব পালন ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দক্ষ নেতৃত্বে সেবার মান অনেক উন্নত হয়েছে বলে মনে করেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/এএএ