শীতে জবুথবু হয়ে জরাজীর্ণ এক ঘরে বসবাস করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী রেজিয়া বেগম (৭৮)। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বীর নিবাসের জন্য আবেদন করলেও ভাগ্যে জোটেনি সরকারি ঘর। এ নিয়ে বড় আক্ষেপ ছিল রেজিয়া বেগমের। জয়নাল আবেদীন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি মারা যান।

গত ২৫ জানুয়ারি বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রেজিয়া বেগমকে নিয়ে ‘মানবেতর জীবন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর, আবেদন করেও পাননি উপহারের ঘর’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের নজরে আসে। রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শীতের উপহার ও নগদ অর্থ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রেজিয়া বেগমকে দেখতে তার বাড়িতে ছুটে যান। এ সময় তিনি তার ঘরের দায়িত্ব নেন এবং মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীনের কবরস্থান সংরক্ষণের দায়িত্ব নেন। এমন খবরে বৃদ্ধা রেজিয়া বেগম ও তার পরিবারের সবাই খুশী হন এবং দোয়া করেন।

জানা গেছে, নোয়াখালীর সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পশ্চিম রাজারামপুর গ্রামের জয়নাল পুলিশের বাড়িতে দুই ছেলে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে বসবাস করছেন রেজিয়া বেগম। দীর্ঘদিন ধরে দুই ছেলেকে নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরে থাকছেন রেজিয়া।

পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ১৬ ডিসেম্বর এই জেলায় যোগদান করেছি। তারপর জাতীয় নির্বাচন শেষ হলো। আমি পত্রিকার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। বর্তমানে সেই মৃত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী কষ্টে আছেন এবং জরাজীর্ণ ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিষয়টি জানতে পেরে কষ্ট পেয়েছি। আমি কথা দিচ্ছি রেজিয়া বেগমকে একটা ঘর করে দেব। এ ছাড়া অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও দেওয়ার চেষ্টা করব।

পুলিশ সুপারকে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রেজিয়া বেগম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি অনেক ধন্যবাদ জানাই পুলিশ সুপার স্যারকে। তিনি আমার দায়িত্ব নিয়েছেন। আমি নামাজ পড়ে উনার জন্য দোয়া করব।

বৃদ্ধা রেজিয়া বেগমের বড় মেয়ে আমেনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসপি স্যার আমাদের ঘরে এসেছেন। আমাদের নগদ টাকা ও কম্বল উপহার দিয়েছেন। তিনি আমাদের ঘরের দায়িত্ব নিয়েছেন। উনি আমাদের অভিভাবকের কাজ করেছেন। আমরা উনার প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ধন্যবাদ জানাই। ঝড় বৃষ্টিতে আমার মা অনেক কষ্ট করেছেন। এখন একটা ঘর হলে মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে। 

কাদির হানিফ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংবাদ দেখে পুলিশ সুপার এই পুলিশ মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে এসেছেন। তিনি উপহার নিয়ে এসেছেন এবং ঘরের দায়িত্ব নিয়েছেন। এই জন্য পুলিশ সুপার মহোদয়কে আমরা ধন্যবাদ জানাই। 

এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) বিজয়া সেন, ডিআইওয়ান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সুধারাম মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জায়েদুল হক রনিসহ স্থানীয় বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন।

হাসিব আল আমিন/এএএ