ফেনী সরকারি কলেজ
বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে পাঠদান, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থীর বিচরণ শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ ফেনী সরকারি কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ডিগ্রি কোর্স নিয়ে কার্যক্রম চলছে বৃহত্তর নোয়াখালীর সুপ্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটির। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজ হলেও বছরজুড়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের এসএসসি, এইচএসসি ও অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষাসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা ও সরকারি ছুটির কারণে বছরের অর্ধেক সময় বন্ধ রাখতে হয় পাঠদান কার্যক্রম।
এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এবার কলেজ থেকে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য মাধ্যমিক ও সমমান (এসএসসি) পরীক্ষার কেন্দ্র সরানোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বছরের বেশিরভাগ সময় কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, এসএসসি, এইচএসসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষাসহ সরকারি বিভিন্ন ছুটির কারণে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকে। তার মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র থাকায় বাড়তি আরও এক মাস ক্লাস হয় না। এই কারণে কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র অন্যত্র সরানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে শিক্ষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় পাঠদান কার্যক্রম কিছুটা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হলেও পাবলিক পরীক্ষার সময়ে একদম বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন নিয়মনীতির কারণে চাইলেও পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।
বিজ্ঞাপন
কাজী শামীমুল হায়াত নামে কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, এমনিতেই সারা বছর কোনো না কোনো উপলক্ষ্যে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এসবের মধ্যে আবার স্কুল পর্যায়ের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র থাকায় আরও এক মাস বন্ধ থাকে। এর কারণে আমাদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পুষ্পিতা চক্রবর্তী নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার জন্য কলেজের পাঠদান বন্ধ রাখা কোনোভাবে মানা যায় না। সামনে রোজা ও ঈদের বন্ধ আসতেছে। এখন আবার লম্বা বিরতি। এবার ফাইনাল পরীক্ষার আগে কলেজে আর ক্লাস হওয়ার সম্ভাবনা নেই। পরীক্ষার কেন্দ্র সরিয়ে না নিলে আমরা নানামুখী সমস্যার মুখে পড়ব।
আবুল কালাম নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ঢাকা পোস্টকে বলেন, অর্থনৈতিক কিছু সমস্যা থাকায় ছেলেকে তেমন প্রাইভেট পড়াতে পারি না। এজন্য আমাদের মত নিম্ন মধ্যবিত্তদের পাঠদানই বড় ভরসা। তবে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক সময় শিক্ষার্থীরা পড়া থেকে দূরে সরে যায়। এছাড়া একটি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রের বিষয়টি অন্যরকম লাগে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও গুরুত্ব দিয়ে ভাবা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। পাবলিক পরীক্ষায় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সময় লাগে। পাশাপাশি অত্র এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। ফলে পরিবেশগত কারণে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। তবে যেদিন পরীক্ষা থাকে না সেদিন ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পাশাপাশি কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলোও বিকেলে নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ অনেক আগে থেকেই ফেনী সরকারি কলেজে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র না রাখার জন্য চেষ্টা করছে। প্রশাসন ও কুমিল্লা বোর্ড যদি এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে কলেজের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জহির উদ্দিন বলেন, এমনিতেই সরকারি ছুটি ৭৬ দিনের সাথে শুক্র-শনিবারের ছুটিতে লম্বা সময় ধরে কলেজ বন্ধ থাকে। এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার বাড়তি এক মাস বন্ধ। পাশাপাশি এইচএসসি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় সব মিলিয়ে বছরের অর্ধেক সময় বন্ধের মধ্যেই কেটে যায়। সারাদেশে একই সিলেবাস হলেও ফেনী কলেজের শিক্ষার্থীদের যথা সময়ে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয় না। এতে শিক্ষকদের আন্তরিকতা থাকলেও কিছু করার থাকে না। ভোগান্তিতে পড়তে হয় কলেজের শিক্ষার্থীদের। এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র অন্যত্র সরানো হলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
এ বিষয়ে ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোক্তার হোসেইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা শিক্ষকরাও উদ্বিগ্ন। এসএসসি পরীক্ষায় ২৫ থেকে ৩০ দিন পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়। যা শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। বিকল্প কোনো জায়গা না থাকাতে এবার কেন্দ্র সরানোর কোনো সুযোগ নেই।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ইতোমধ্যে এসএসসি পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে কেন্দ্র সরানোর সুযোগ নেই। আগামীতে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা করে সকলের মতামত নিয়ে আশপাশের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রের প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে শিক্ষা কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য আগামীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তারেক চৌধুরী/আরএআর