বিয়েতে রাজি না হওয়ায় সাবেক স্ত্রীকে হত্যা, যুবকের যাবজ্জীবন
ফরিদপুরে সাবেক স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে আলমগীর হোসেন (৩৪) নামে এক যুবককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক অশোক কুমার দত্ত এ আদেশ দেন।
বিজ্ঞাপন
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আলমগীর হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মহিষকুন্দি উপজেলার খড়িবনা গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে পুলিশ প্রহরায় জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আলমগীর হোসেনের সঙ্গে ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর ফরিদপুরের সদরপুরের বিশ্বাসডাঙ্গী গ্রামের কালাম মোল্লার মেয়ে রিতা আক্তারের বিয়ে হয়। এ দম্পতির ঘরে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে পারিবারিক কলহের কারণে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। চার মাস পর সদরপুরের খালাশিডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহ জালালের সঙ্গে রিতার দ্বিতীয় বিয়ে হয়।
দ্বিতীয় বিয়ের পর রিতা তার স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে চরভদ্রাসন সদরের বিএসডাঙ্গী গ্রামে ইউসুফ বাছারের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তবে দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে বাজারে যাওয়া আসার পথে রিতাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতেন সাবেক স্বামী। একপর্যায়ে রিতাকে পুনরায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আবারও নতুন করে সংসার করার কথা বলেন আলমগীর। রিতা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। একপর্যায়ে আলমগীর রিতাকে হত্যার হুমকি দেন।
বিজ্ঞাপন
২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে ছেলেকে নিয়ে বাজারে যান রিতা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভাড়া বাসায় ফেরার পথে চরভদ্রাসন সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বপাশের ফাঁকা জায়গায় পৌঁছালে আগে থেকে ওত পেতে দাঁড়িয়ে থাকা তার সাবেক স্বামী আলমগীর রিতার পেটে চাকু মারেন। এ সময় ছেলের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে আলমগীর পালিয়ে যান। পরে এলাকাবাসী রিতাকে উদ্ধার করে চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। পুলিশকে রিতা (২৫) জানান, সাবেক স্বামী আলমগীর তাকে ছুরি মেরেছে। পরদিন ১০ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন রিতা।
এ ঘটনায় রিতার দ্বিতীয় স্বামী মো. শাহ জালাল বাদী হয়ে ১০ এপ্রিল রাতে চরভদ্রাসন থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করেন চরভদ্রাসন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) স্বপন কুমার। তিনি ২০১৮ সালের ১৪ জুন আদালতে আলমগীরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেন।
রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সালাম হাশেমি বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। যাবতীয় তথ্য উপস্থাপন করার পরও সঠিক রায় থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নওয়াব আলী মৃধা বলেন, এ রায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর ফলে অপরাধীদের অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই জেনে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট।
জহির হোসেন/আরএআর